News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একীভূত হচ্ছে ৫ ব্যাংক

‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একীভূত হচ্ছে ৫ ব্যাংক

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নজিরবিহীন আর্থিক দুর্বলতার কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। একীভূতব্য ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।

নতুন ব্যাংকের চূড়ান্ত নাম করা হয়েছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, যা আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরি হলে দেশের বৃহত্তম ইসলামি ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সরকারকে মালিকানা রাখবে।

সূত্র জানায়, ব্যাংক স্থাপনার প্রক্রিয়াটি শুরু হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের মাধ্যমে। এরপরে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্ম থেকে কোম্পানির নিবন্ধন নেওয়া হবে এবং নতুন ব্যাংকের ব্যবসা লাইসেন্সের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হবে।

প্রাথমিকভাবে নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন নির্ধারিত হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকবে। এই মূলধনের মধ্যে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করবে, যা নগদ আকারে ১০ হাজার কোটি এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকক বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানত সুরক্ষা তহবিল ও করপোরেট আমানতকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।

নতুন ব্যাংকের মূলধনের বড় অংশই ব্যয় হবে আমানতকারীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধের কাজে। দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে অবিলম্বে ফেরত দেওয়া হবে। বড় অংকের আমানত ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে, টাকা ৬ মাস থেকে ২৪ মাসের মধ্যে প্রতি কিস্তিতে এক লাখ টাকা করে মোট ছয় কিস্তিতে প্রদান করা হবে। ২৪ মাসের পর অবশিষ্ট অর্থ যেকোনো সময় উত্তোলনযোগ্য হবে। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদী আমানত ধাপে ধাপে নবায়ন করা হবে। তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বা ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে এই শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে না।

আরও পড়ুন: ভরিতে সোনার দাম কমেছে ৮,৩৮৬ টাকা

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রাথমিক প্রস্তাবনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ব্যাংকের নাম ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ পরে একাধিক নাম প্রস্তাবনার মধ্যে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ চূড়ান্ত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। সরকারি মালিকানায় নতুন ব্যাংক গঠিত হলে মানুষ নতুন করে আমানত রাখতে উৎসাহিত হবেন। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর জন্যও ব্যাংক থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

একীভূত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবেন এবং চাকরি ধারাবাহিক থাকবে। নতুন ব্যাংকের বোর্ড চাকরিতে থাকা ব্যক্তিদের পদ নির্ধারণ বা পুনর্গঠন করতে পারবে। যারা চাকরিতে থাকতে চায় না, তারা পদত্যাগ করতে পারবেন এবং বিদ্যমান সুবিধা পাবেন। নতুন ব্যাংকের নয়জন পরিচালক থাকবেন—পাঁচজন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত এবং চারজন প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে মনোনীত।

প্রাথমিকভাবে অর্থমন্ত্রণালয় সরকারের পক্ষে মালিকানা রাখবে, যা ধীরে ধীরে বেসরকারিতে হস্তান্তরিত হবে। তিন বছরের মধ্যে ব্যাংকে সামরিক অংশীদার আনা হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ব্যাংক সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে এই ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত আমানত ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অডিটে দেখা গেছে, এই ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় অংশ অপ্রদর্শনযোগ্য ছিল।

উল্লেখ্য, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর গ্রাহকরা আশা করতে পারেন যে অর্থ ফেরত দেওয়ার সময়সূচি স্বচ্ছ ও নিরাপদ হবে, এবং তাদের আমানত সুরক্ষিত থাকবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়