News Bangladesh

পরিতোষ লিমন, সাংবাদিক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২২, ৮ মে ২০২৫
আপডেট: ১৩:২৯, ৮ মে ২০২৫

৮ মে: বিশ্ব গাধা দিবস, অবহেলিত প্রাণীটি বোকা নয়- পরিশ্রমী

৮ মে: বিশ্ব গাধা দিবস, অবহেলিত প্রাণীটি বোকা নয়- পরিশ্রমী

ছবি: সংগৃহীত

’তুমি গাধা নাকি?’ — এ বাক্যটি আমাদের বহুবার শুনতে হয়েছে, কিংবা আমরাও বলেছি। সাধারণত কারো বোকামি বা ভুলের ক্ষেত্রে এই তুলনাটি টানা হয়। অথচ, গাধা আদতে বোকা নয়; বরং এটি একটি পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল ও মানব সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রাণী। আর সেই অবহেলিত কিন্তু অপরিহার্য প্রাণীর অবদানকে স্মরণ করতেই প্রতি বছর ৮ মে পালিত হয় ‘বিশ্ব গাধা দিবস’।

গাধাকে নিয়ে কুসংস্কার বনাম বাস্তবতা
মানুষের ভাষায় ’গাধা’ শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হলেও বাস্তবতায় গাধা হলো একটি নির্ভরযোগ্য, শক্তিশালী ও ধৈর্যশীল প্রাণী। যারা একটানা বহু সময় ধরে ভার বহনে সক্ষম। কেউ প্রচণ্ড পরিশ্রম করলে আমরা তাকে বলি ’গাধার মতো খাটছে’—এটিও গাধার এক অনন্য গুণের স্বীকৃতি। এই ভুলধারণা ও কুসংস্কার দূর করে গাধার প্রকৃত মূল্যায়ন করতেই দিবসটির সূচনা।

দিবসটির সূচনা: আর্ক রাজিকের প্রয়াস
বিশ্ব গাধা দিবসের সূচনা করেন মরুভূমির প্রাণী গবেষক ও বিজ্ঞানী আর্ক রাজিক। ২০১৮ সালে তিনি ফেসবুকে একটি গ্রুপ চালু করেন, যেখানে গাধা নিয়ে তথ্য প্রচার শুরু করেন। তার দাবি ছিল—গাধারা বহু বছর ধরে মানুষের হয়ে কাজ করলেও, তারা সে অনুযায়ী সম্মান বা যত্ন পায় না। আর্ক রাজিকের এই প্রচেষ্টাই পরে রূপ নেয় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা দিবসে।

গাধার ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও বিবর্তন
গাধা প্রায় ৫,০০০ বছর ধরে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সাল থেকেই গাধা মানুষের সেবা করে আসছে। বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শুরু করে কৃষিকাজ, নির্মাণকাজ এবং পণ্য পরিবহনে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের ধৈর্য, সহনশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের ক্ষমতা গাধাকে মানব সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, গাধার দুটি পূর্বপুরুষ প্রজাতি রয়েছে—সোমালি বন্য গাধা ও নুবিয়ান বন্য গাধা, যাদের উভয়ের উৎপত্তি আফ্রিকায়। 

গাধা সাধারণত ৫০ থেকে ৫৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা ঘণ্টায় প্রায় ৩০-৩১ মাইল বেগে চলতে পারে এবং অনেক কিলোমিটার ভার বহনে সক্ষম। তাদের বড় কান শুধু সৌন্দর্যই নয়, বরং তা তাদের একে অপরের সঙ্গে দূর থেকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। কঠোর জলবায়ু ও খরায়ও তারা টিকে থাকতে সক্ষম, যা তাদের মরুভূমি অঞ্চলে বিশেষভাবে উপযোগী করে তোলে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
একসময় বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে গাধার ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। পণ্য বহন, কৃষিকাজ ও নির্মাণসেবায় গাধা ছিল অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গাধার ব্যবহার কমে যায়। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ স্থানে গাধা দেখা যায় না; কেবল কিছু চিড়িয়াখানা ও গবেষণা প্রকল্পেই তাদের উপস্থিতি রয়েছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ২০১৫ সালে গাধার সংখ্যা ছিল ৯টি, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে। তবে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গাধার সংখ্যা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী উদযাপন ও সচেতনতা
বিশ্বজুড়ে প্রাণী অধিকার ও সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনগুলো ৮ মে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গাধা দিবস উদযাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, SPANA নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা ২০২৩-২০২৪ সালে ১৬টি দেশে ২,১৬,৯৮৬টি গাধাকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। তারা গাধার মালিকদের প্রশিক্ষণ ও শিশুদের শিক্ষার মাধ্যমে গাধার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া, আফ্রিকায় গাধার চামড়া থেকে তৈরি ’ejiao’ নামক চীনা ঐতিহ্যবাহী ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে গাধার সংখ্যা হুমকির মুখে পড়ে। SPANA ও অন্যান্য সংস্থার প্রচেষ্টায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান ইউনিয়নের অধিবেশনে গাধার চামড়ার বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

দিবসটির মূল বার্তা—গাধা কেবল বোঝা বহনের জন্য নয়, মানব সভ্যতায় তাদের অবদান যথাযথভাবে উপলব্ধি ও স্বীকৃতি দেওয়াও জরুরি।

এই দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়: প্রতিটি প্রাণী—চিকন হোক, গাঢ় হোক, স্মার্ট হোক বা ধীর—সমাজ ও প্রকৃতিতে তাদের নিজস্ব গুরুত্ব বহন করে। গাধা দিবস আমাদের অনুপ্রাণিত করে পশুদের প্রতি আরও মানবিক হতে, তথ্য জানাতে ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে। 

গাধা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

  • বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়ন গাধা রয়েছে। তারা তাদের স্মৃতিশক্তি ও সতর্কতার জন্য পরিচিত।
  • গাধা সামাজিক প্রাণী; তারা গভীর বন্ধন গড়ে তোলে এবং প্রিয়জন হারালে দুঃখ প্রকাশ করে।
  • তারা মরুভূমিতে হুফ দিয়ে পানি খুঁজে বের করতে পারে, যা অন্যান্য প্রাণীরও উপকারে আসে।

উদযাপনের উপায়

  • গবেষণা ও শিক্ষা: গাধার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন।
  • দান: গাধার সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোতে অর্থ সহায়তা দিন।
  • সামাজিক সচেতনতা: সামাজিক মাধ্যমে গাধার প্রতি সদয় আচরণের বার্তা ছড়িয়ে দিন।

বিশ্ব গাধা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি প্রাণীরই সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই দিনে আমরা গাধার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তাদের সুরক্ষায় সচেষ্ট হই।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়