News Bangladesh

সুমন মুখার্জী, নীলফামারী সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১৫:৪৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নীলফামারীর ‘বড় মাঠ’ এখন শুধুই খেলার মাঠ নয়, হয়ে উঠেছে মিলনকেন্দ্র

নীলফামারীর ‘বড় মাঠ’ এখন শুধুই খেলার মাঠ নয়, হয়ে উঠেছে মিলনকেন্দ্র

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

সাদিয়া আক্তার। বয়স ৫ বছর। বিকেল হলে বাবার কাছে বায়না ধরে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। শহুরের চার দেয়ালের জীবন থেকে সামান্য স্বস্তি পেতে কার না ভালো লাগে! তাই তো বাবা শাহিনূর আলম (৪৬) তার আদরের মেয়ের মন ভালো করতে প্রতিদিনে চলে আসেন নীলফামারী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, যা সবার কাছে ‘বড় মাঠ’ নামে পরিচিত।

মেয়ের আঙুল ধরে মাঠে হাঁটতে থাকা শাহিনূর আলম নিউজবাংলাদেশকে বলেন, অফিসের কাজ শেষ করেই ওকে নিয়ে মাঠে চলে আসি। সে  এখানে এসে খুব আনন্দ পায়, খেলে আর ছোটাছুটি করে। কিন্তু ওর দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে বাসার ভেতরে। আশেপাশে খেলার জায়গা নেই, স্কুলেও মাঠ নেই। তাই ওর মন আর শরীর ভালো রাখতে রোজ এখানে চলে আসি।

কেবল সাদিয়া বা শাহিনূর নন, শহরের প্রায় সব মানুষের কাছেই নীলফামারীর  ‘বড় মাঠ’ স্বস্তির জায়গা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এই মাঠ। দিনের আলো ফোটার সাথে সাথেই মাঠের দৃশ্য বদলে যায়। একদিকে কেউ কেউ আসেন শরীরচর্চা করতে, কেউ বা আসেন ফুটবল প্র্যাক্টিস করতে। একসময় বিকেলবেলায় রাস্তার মোড়ে বসত আড্ডা। ক্যারম। আবার কেউ বড়দের সঙ্গে চা-স্টলে বসে খোশগল্পে মেতে উঠত। একটি মাঠ পরিবর্তন করে দিয়েছে এ চিত্র। এখন বিকেল হলেই  মাঠের পাশে থাকা বেঞ্চগুলো হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের আড্ডার স্থান।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাঠের মোট আয়তন ১৩.২৩ একর। মানুষের হাঁটার সুবিধার জন্য মাঠের চারপাশে টাইলস বসানো একটি সুন্দর রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে লাগানো হয়েছে নানা রঙের ফুলের গাছ, যা মাঠের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মাঠের প্রবেশপথে একটি দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে। শুধু তাই নয়, মাঠের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সকাল-বিকেল প্রতিদিন ঝাড়ু দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য পৌরসভা থেকে ১৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই মাঠে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা দুটি আধুনিক ও উন্মুক্ত ব্যায়ামাগার তৈরি করা হয়েছে। এখানে উন্নতমানের শরীরচর্চার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামও রাখা হয়েছে। এই উন্মুক্ত ব্যায়ামাগারে কথা হয় স্বপ্না রানী দাসের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাদেশকে বলেন, আমি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। ডাক্তার প্রতিদিন শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই রোজ এখানে আসি। স্বপ্না রানীর মতো অনেকেই এখন এই ব্যায়ামাগারে শরীরচর্চা করতে আসছেন।

সরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি নিউজবাংলাদেশকে জানান, আমি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকি। তাই বিকেলে এখানে এসে একটু হাঁটাচলা করি, যাতে শরীর সুস্থ থাকে।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরের খোয়াড় গ্রামে সাদা শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য

তিনি আরও বলেন, অফিসের কাজের চাপ এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে শরীরচর্চার সুযোগ পাই না। এই মাঠটি আমাদের মতো চাকরিজীবীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এখানে এসে মনটাও সতেজ হয়।

নীলফামারীর মানুষকে একটি দৃষ্টিনন্দন মাঠ উপহার দেওয়ার পেছনের মূল কারিগর হলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। নিউজবাংলাদেশকে তিনি জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি সুন্দর মাঠ থাকায় আমরা এর সুফল পাচ্ছি। এই মাঠটি এখন শুধু খেলাধুলা বা শরীরচর্চার স্থান নয়, বরং এটি শহরের মানুষের মিলনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

জেলা প্রশাসক জানান, আমরা এই মাঠটিকে সবার জন্য পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলেছি। আমাদের এই কাজ এখনও চলমান। মাঠের সৌন্দর্য আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা আরও বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। মাঠের পরিচ্ছন্নতা ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

সুমন মুখার্জী, নীলফামারী সংবাদদাতা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়