News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি ও ৪ বাম দল

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি ও ৪ বাম দল

ছবি: সংগৃহীত

বহু আলোচনার পর অবশেষে স্বাক্ষর সম্পন্ন হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।

এর কিছু আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।

এই সনদকে রাষ্ট্র সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হলেও অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম ধারার রাজনৈতিক দল।

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

কিন্তু অনুপস্থিত ছিলেন এনসিপি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা।

অনুষ্ঠানস্থলে আগে থেকেই রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকলেও এনসিপি ও বাম দলগুলোর কোনো প্রতিনিধি দেখা যায়নি।

এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, এনসিপির কেউ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাননি। না যাওয়ার কারণ আগেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানায়, আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা ছাড়া তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো আইনি ভিত্তি অর্জিত হবে না। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তি–র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে।

 

বাম ধারার চারটি দল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সংশোধিত খসড়া না পেলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।

তাদের অভিযোগ, সনদের খসড়ায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনা প্রতিফলিত হয়নি।

সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির শুক্রবার বিকেলে বলেন, সিপিবিসহ চার বাম দলের নেতাদের কেউ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাননি। আমরা কালই (বৃহস্পতিবার) আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।

বাম দলগুলোর মতে, সনদটি সংশোধন ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এতে কিছু প্রস্তাব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন—

১. সংবিধান সংস্কার কমিশন,
২. নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন,
৩. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন,
৪. দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন,
৫. পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং
৬. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনার পর ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়।

এই প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতেই তৈরি হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।

জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় রাখা হয়নি। দলটিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৃহস্পতিবার বলেন, কোনো দল চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৪টায়। তবে দুপুর ১টার দিকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেয়।

তাদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ।

পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মঞ্চে এসে উপস্থিত হন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা সনদে স্বাক্ষর করেছেন।

এসময় রাষ্ট্র সংস্কার ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বক্তৃতা দেন অংশগ্রহণকারী নেতারা।

সনদ স্বাক্ষর শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা একসঙ্গে ছবি তোলেন এবং ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।

জুলাই জাতীয় সনদ মূলত রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ঐকমত্যভিত্তিক দলিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের সূত্রে জানা গেছে, সনদে প্রস্তাবিত ধারাগুলো ধীরে ধীরে আইন আকারে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তবে এনসিপি ও বাম দলগুলোর অনুপস্থিতি এই ঐকমত্যকে আংশিক করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, দেশের প্রধান ধারার সব রাজনৈতিক দল যুক্ত না থাকলে জাতীয় ঐকমত্য বাস্তবিক অর্থে পূর্ণতা পাবে না।

দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধারাবাহিক আলোচনার পর স্বাক্ষরিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারযাত্রায় নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।

তবে অনুষ্ঠানের আগেই সংঘর্ষ, বাম দল ও এনসিপির অনুপস্থিতি, এবং আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন—সব মিলিয়ে এই সনদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়