‘সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসি’

ফাইল ছবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য ভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সংলাপের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতির সব ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে এবং জনগণের আস্থা অর্জনের মতো একটি নির্বাচন আয়োজনই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
সিইসি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা সংখ্যায় ২০ লাখেরও বেশি। একই সঙ্গে নারী-পুরুষ ভোটারের অনুপাত সমন্বয় করার কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুন্দরভাবে করার জন্য আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। পাশাপাশি ৯টি আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট চালুর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও ভোট দিতে পারবেন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে ভোটের সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে।
সিইসি বলেন, আমরা এবার সবার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করব। যারা হাজতে আছেন তাদের ভোটের ব্যবস্থাও করা হবে।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চারজন নির্বাচন কমিশনার, কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, কবি মোহন রায়হান, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
আরও পড়ুন: বেআইনি, অন্যায় নির্দেশনা দেব না: সিইসি
অন্যদিকে কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এদিন সকালে সুশীল সমাজের মোট ২৬ প্রতিনিধি অংশ নেন প্রথম দফা সংলাপে। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় ৩৩ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ এস এম ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার, ভোটের স্বচ্ছতা ও আস্থার বিষয়গুলো নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
সিইসি তাদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, সংস্কার কমিশনের আলোচনায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। আজকের সংলাপে আপনারা যে মতামত দেবেন, তা বাকি ঘাটতিগুলো পূরণে ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূজার ছুটি শেষে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী, জুলাইযোদ্ধা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে দল নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৫৬টি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থতা ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে জামায়াত ও জাগপা নিবন্ধন ফেরত পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন বহাল রেখেছে। অন্যদিকে নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
ইসি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সিইসি তার বক্তব্যে শেষবারের মতো পুনর্ব্যক্ত করেন, আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এজন্য কমিশনের যা করণীয়, তা যথাযথভাবে করা হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি