News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৭ আগস্ট ২০২৫

দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী

দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের তৈরি করা ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। 

এই সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তবে সব দল সব বিষয়ে একমত হয়নি। এই সনদে রাষ্ট্রের কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। নিচে সনদের মূল সুপারিশগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

রাষ্ট্রকাঠামো ও সরকারের গঠন

  • প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি আর দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না।
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন।
  • আইনসভা: দেশে একটি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকবে, যার মধ্যে নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) ও উচ্চকক্ষ (সিনেট) থাকবে। উচ্চকক্ষে ১০০ জন সদস্য থাকবেন, যারা নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন।
  • নারীর প্রতিনিধিত্ব: জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে এবং এই হার পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।

সংবিধান সংস্কার

  • রাষ্ট্রভাষা ও নাগরিকত্ব: প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা এবং অন্যান্য মাতৃভাষাকে প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। নাগরিকদের পরিচিতি হবে ‘বাংলাদেশি’।
  • সংবিধান সংশোধনী: সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
  • জরুরি অবস্থা: জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। জরুরি অবস্থায় নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং বিচার ও দণ্ড সম্পর্কিত মৌলিক অধিকার খর্ব করা যাবে না।
  • রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি' অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা

  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক পদে থাকতে পারবেন না।
  • ক্ষমতার ভারসাম্য: রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল, আইন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে।
  • রাষ্ট্রপতির অভিশংসন: রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের জন্য প্রথমে নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাব পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষেও দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামার চূড়ান্ত খসড়া

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

  • নিয়োগ প্রক্রিয়া: মেয়াদ অবসানের ১৫ দিন পূর্বে অথবা সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এই উদ্দেশ্যে স্পিকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
  • সময়সীমা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন হবে। দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে এই মেয়াদ সর্বোচ্চ আরও ৩০ দিন বাড়ানো যাবে।
  • বয়সসীমা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭৫ বছর করা হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের ৭২ বছর বয়সের সীমা থেকে বেশি।

বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন

  • প্রধান বিচারপতি নিয়োগ: আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
  • বিচারক নিয়োগ কমিশন: সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (Judicial Appointments Commission-JAC) গঠন করা হবে।
  • সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ: রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে এবং প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
  • দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক): সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অবৈধ আয়ের বৈধকরণ বন্ধ করা হবে। নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যের যথার্থতা যাচাই করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতি বছর নিজেদের ও পরিবারের আয় ও সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেবেন।

এই সনদটি গত বছরের আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়