News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫

‘বিগ ব্রাদার’ বাস্তবতা: আজও ঝুঁকিতে নাগরিক গোপনীয়তা

‘বিগ ব্রাদার’ বাস্তবতা: আজও ঝুঁকিতে নাগরিক গোপনীয়তা

ছবি: সংগৃহীত

জর্জ অরওয়েলের কালজয়ী উপন্যাস ‘১৯৮৪’-এর সেই বিখ্যাত সতর্কবাণী, “বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ”, যেন আজকের বাংলাদেশে এক তিক্ত বাস্তবতা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় নজরদারি এবং আড়িপাতার এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, যার পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি। সম্প্রতি, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এই ভয়াবহ চিত্রটি উঠে এসেছে।

নজরদারির পরিধি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
গবেষণা অনুযায়ী, এই নজরদারি কেবল ফোন কলের আড়িপাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল যা দিয়ে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নজরদারির সরঞ্জাম কেনার প্রবণতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ভিন্নমত দমন এবং ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার ঘটনা এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০১৫ সালে তার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে দুই বছর কারাভোগ করতে হয়। ধারণা করা হয়, এই কথোপকথন আড়িপাতার প্রযুক্তির মাধ্যমেই সংগ্রহ করা হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের পরেও এসব নজরদারি সরঞ্জাম ও প্রতিষ্ঠান এখনও সক্রিয় থাকায় সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুন: দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনও অব্যাহত মব জাস্টিস: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা
নজরদারির কার্যক্রম পরিচালনার মূল ব্যয়ভার বহনকারী সংস্থা হলো ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। যদিও জাতিসংঘ এই সংস্থাটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে, এটি এখনও পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২২টি আইন নজরদারিকে বৈধতা দিয়েছে, কিন্তু নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং অধিকার রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কোনো আইন বা কাঠামো নেই। এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার সহজ হয়ে গেছে।

তদন্ত ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গবেষণার পর নজরদারি সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে সরকার দাবি করেছে। তবে, নজরদারির মূল নীতিমালা এখনও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এমনকি, স্টারলিংক-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তিতেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিল হওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, একটি স্বতন্ত্র তত্ত্বাবধান কাঠামো এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়া নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ পর্যন্ত এই প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি দুর্বলতাগুলো দূর না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ‘বিগ ব্রাদার’-এর অদৃশ্য নজরদারির ছায়া বাংলাদেশের জনগণের ওপর থেকেই যাবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়