৩ শর্তে পিতৃত্বকালীন ছুটির পক্ষে মত পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টার
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্ণ বেতনে দুই সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করার জন্য নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিজীবী পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তবে তিনি তিনটি শর্ত পালনের ওপর জোর দিয়েছেন।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) সহযোগিতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে, যার এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মাতৃদুগ্ধ পানকে অগ্রাধিকার দিন, টেকসই সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলুন’।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি আলোচনায় আসছে। তিনি মনে করেন, বাবারা যদি শিশুদের সঠিকভাবে সময় দেন, তবে এই ছুটি দেওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে লিখিত তিনটি শর্ত মানতে হবে:
১. শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে: ছুটিপ্রাপ্ত বাবাকে তার সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাতে হবে।
২. শিশুর যত্ন নেওয়ায় সমান অংশগ্রহণ: বাবারা যেন শিশুর পরিচর্যায় সমানভাবে অংশ নেন, যেমন—শিশুকে খাওয়ানো, পরিষ্কার রাখা ও তার খেলাধুলায় যুক্ত থাকা।
৩. শিশুর মায়ের সেবা: সন্তান জন্মের পর মায়ের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। বাবাকে এই সময়ে মায়ের সেবা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, তিনি প্রথম দিকে পিতৃত্বকালীন ছুটির পক্ষে ছিলেন না, কারণ তার শঙ্কা ছিল—ছুটি নিয়ে পুরুষেরা পরিবারে সময় দেবেন কি না, বা ছুটি উল্টো মায়ের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে কি না। তবে যদি লিখিত শর্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে বাবারা এই সময়ে শিশুর ও মায়ের যত্ন নেবেন, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা কমছে প্রধানমন্ত্রীর, নিয়োগ ক্ষমতা বাড়ছে রাষ্ট্রপতির
কর্মশালায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, শিশুদের গুঁড়া দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা কমাতে হবে এবং সমন্বিতভাবে মাতৃদুগ্ধ পানের ওপর জোর দিতে হবে। এ জন্য সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, কেবল চিকিৎসকদের দোষারোপ করে লাভ নেই, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী আসে। তিনি গ্রামীণ ধাত্রীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নূরজাহান বেগম জানান, মাতৃদুগ্ধ নিয়ে কাজ কেবল সরকার বা স্বাস্থ্য খাতের নয়। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা, এনজিও কর্মী এবং গণমাধ্যম—সবারই এ বিষয়ে দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা গেলে শিশু ভালো দুধ পাবে, তাই মায়ের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস কে রায়।
তিনি জানান, দেশে মাতৃদুগ্ধ পানের হার ক্রমশ কমছে। ২০১৭-১৮ সালের জরিপে প্রথম ছয় মাসে একচেটিয়াভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৫ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে ৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন:
- সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ঘাটতি।
- ব্রেস্ট-মিল্ক সাবস্টিটিউট (বিএমএস) আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়া।
- কর্মজীবী মায়েদের পর্যাপ্ত ছুটি না পাওয়া।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সরোয়ার বারী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, মেধাসম্পন্ন জাতি গড়তে হলে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন, বিবিএফের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সারিয়া তাসনিমসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








