যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত ২৮
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত গাজাজুড়ে অন্তত তিনটি এলাকায় পরিচালিত এসব হামলায় কমপক্ষে ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৭ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরা।
ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের কাছে আল-মাওয়াসি এলাকায় একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। একই সময় গাজা সিটির পূর্বাংশের শুজাইয়া এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়স্থল একটি ব্যস্ত জংশন এবং জেইতুন এলাকায় একটি বহুতল ভবনেও বোমাবর্ষণ করা হয়।
জেইতুনের সেই ভবনে একটি পরিবারের বাবা–মা ও তিন সন্তানসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন। একপর্যায়ে পুরো ভবনটি ধসে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, ওই পরিবারটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর নিরাপদ ভেবে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বোমাবর্ষণ কখনোই পুরোপুরি থামেনি।
তার ভাষায়, যুদ্ধ এখনো চলছে। গাজার মানুষ প্রতিদিনই হামলার আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে, আর প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে।
জেইতুন, শুজাইয়া ও আল-মাওয়াসি—সবখানেই হামলার পর বিস্ফোরণের শব্দে গাজাজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র শীত ও মানবেতর জীবনযাপনের মধ্যে আশ্রয় শিবিরগুলোর হাজারো পরিবার আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, উপত্যকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু স্যাতস্যাতে, ভেজা পরিবেশে বসবাস করছে—যা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, খান ইউনুস এলাকায় কর্মরত তাদের বাহিনীর ওপর হামাস সদস্যরা গুলি চালানোর পরই হামলা চালানো হয়েছে। সেনাদের ভাষ্য, লক্ষ্যবস্তুগুলো ছিল হামাসের অবস্থান, তাই এটি যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন নয়।
আরও পড়ুন: গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে জাতিসংঘের অনুমোদন
আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ চলমান থাকবে। পাঁচটি হামাস-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে হামাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল “দুর্বল ও স্পষ্ট মিথ্যা” অজুহাতে হামলা চালিয়েছে। সংগঠনটির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা পুনরায় শুরুর পথ খুঁজছেন।
বুধবার গাজায় হামলার পাশাপাশি লেবাননেও কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই দিন আগে দক্ষিণ লেবাননের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় এক ডজনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এই সময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনা’ সমর্থন দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। এতে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন এবং বোর্ড অব পিস গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চায়—গাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে হামাসকে সরিয়ে দেওয়া হোক। তবে হামাসসহ গাজার অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা আল-হক সতর্ক করেছে, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের ওপর ‘গুরুতর আঘাত’ আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক কুইন্সি ইনস্টিটিউট–এর জ্যেষ্ঠ গবেষক খালেদ এলগিন্ডি বলেন, ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তিনি মন্তব্য করেন, তারা যুদ্ধবিরতি উদযাপন করেছে, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল শর্ত মানছে না। এখন পরীক্ষা—নিরাপত্তা পরিষদ ও যুক্তরাষ্ট্র আসলেই কি যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেবে?
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ১০ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল অন্তত ৩৯৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








