News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

অবশিষ্ট ১৩ জিম্মিকেও মুক্তি দিলো হামাস

অবশিষ্ট ১৩ জিম্মিকেও মুক্তি দিলো হামাস

ছবি: সংগৃহীত

দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় ইসরায়েলি জিম্মিদের বন্দিত্ব শেষের পথে। হামাসের হাতে বন্দি থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা রেড ক্রসের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হয় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে। 

পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং মানবিক সংকট নিরসনের বড় পদক্ষেপ।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে প্রথম দফায় সাতজন এবং দুপুরে দ্বিতীয় দফায় অবশিষ্ট ১৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। 

টাইমস অব ইসরায়েল, এএফপি ও রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন—এলকানা বাহবোত, অ্যাভিনাতান ওর, ইউসেফ-হাইম ওহানা, ইভায়াতার ডেভিড, রম ব্রাসলাভস্কি, সেগেভ কালফন, নিমরোদ কোহেন, ম্যাক্সিম হেরকিন, এইতান হর্ন, মাতান জাঙ্গাউকের, বার কুপেরশতেইন, ডেভিড কুনিও এবং এরিয়েল কুনিও।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকা থেকে রেড ক্রসের গাড়িতে করে তাদের তুলে নেওয়া হয়। পরে গাজা সীমান্ত পার করে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং এরপর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই জিম্মিরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার সময় বন্দি হন। ওই হামলায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। পরদিন, ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। দুই বছরের সেই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় বন্দি বিনিময় শুরু, রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর ৭ জিম্মি

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০ দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসে। ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষ এতে সম্মতি দেওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর অংশ হিসেবে সোমবার দুই দফায় ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। রেড ক্রস ও আইডিএফ নিশ্চিত করেছে, গাজায় আর কোনো জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি নেই।

চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে হামাস আরও ৪৭ জন জিম্মির মরদেহ এবং ২০১৪ সালে গাজায় নিহত এক ইসরায়েলি সেনার মরদেহও রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে। তবে এই প্রক্রিয়া সোমবারের মধ্যে শেষ হবে না বলে জানিয়েছে তেল আবিব।

জিম্মিদের মুক্তির খবরে তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ হাজারো ইসরায়েলি উল্লাসে ফেটে পড়েন। অপরদিকে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক হাজারো ফিলিস্তিনি এখনো মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে ২৫০ জনকে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দায়ে আটক করা হয়েছিল, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে 'ইসরায়েলি নাগরিক' হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গাজার যুদ্ধ চলাকালীন আরও ১,৭০০ জনকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সকল জীবিত জিম্মি ও মৃতদের মরদেহ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবেন না। হামাসের দাবি, অন্যান্যদের পাশাপাশি সাত শীর্ষ ফিলিস্তিনি নেতাকেও মুক্তি দিতে হবে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

গাজা শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিশরের শার্ম এল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে তিনি ইসরায়েলে যাত্রাবিরতি নিয়ে পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে গাজার ভবিষ্যৎ ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন বিশ্বনেতারা। এতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। তবে ইসরায়েল ও হামাসের অনুপস্থিতিতে পুরো উদ্যোগটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এই মুক্তির মাধ্যমে গাজা যুদ্ধের অন্যতম মানবিক সংকটের একটি অধ্যায় সমাপ্তির পথে। তবে যুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক সমঝোতা ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া এখনো জটিলতায় রয়ে গেছে। বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে—এই যুদ্ধবিরতি কি স্থায়ী শান্তির পথে এগোবে, নাকি আবারও রক্তপাতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়