২৪ ঘণ্টায় ক্যাটাগরি-৫ মাত্রায় ঘূর্ণিঝড় ‘অ্যারিন’
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানেই ভয়াবহ শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘অ্যারিন’ ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার এক মহাশক্তিশালী হ্যারিকেনে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার (NHC) জানিয়েছে, এর স্থায়ী বাতাসের গতিবেগ এখন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ মাইল (প্রায় ২৬০ কিলোমিটার), যা এটিকে চলতি বছরের আটলান্টিক মৌসুমের প্রথম ও সবচেয়ে বিপজ্জনক ঝড়ে রূপান্তরিত করেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, একটি ট্রপিক্যাল স্টর্ম থেকে এত দ্রুত মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাটাগরি-৫ হ্যারিকেনে পরিণত হওয়া অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইক ব্রেনান এই ঝড়কে ‘জীবনঘাতী’ বলে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন, এটি ‘বিস্ফোরকভাবে গভীর ও তীব্র’ আকার ধারণ করেছে।
ঘূর্ণিঝড় অ্যারিন বর্তমানে ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এটি লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং পুয়ের্তো রিকোর উত্তর দিক দিয়ে অতিক্রম করবে। এসব অঞ্চলে প্রচণ্ড বাতাস এবং ছয় ইঞ্চি (প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় ত্রাণবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৫
যদিও এই মুহূর্তে অ্যারিনের সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই, তবুও এর প্রভাবে দেশটির প্রায় পুরো পূর্ব উপকূলজুড়ে প্রাণঘাতী ঢেউ এবং ‘রিপ কারেন্ট’ সৃষ্টি হতে পারে। রিপ কারেন্ট হলো এক ধরনের সংকীর্ণ ও শক্তিশালী স্রোত, যা সাঁতারুদের মুহূর্তের মধ্যে উপকূল থেকে গভীর পানির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্লোরিডা, মিড-অ্যাটলান্টিক অঞ্চল এবং বারমুডার উপকূলীয় এলাকায় এই ঢেউ ও রিপ কারেন্ট সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ ধারণ করতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ আরও সতর্ক করেছে যে, ঝড়টি ধীরে ধীরে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বাহামার পূর্ব উপকূল ঘেঁষে উত্তর ক্যারোলিনার ‘আউটার ব্যাংকস’ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
ঝড়ের সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলায় এরই মধ্যে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ড পুয়ের্তো রিকোর সান হুয়ানসহ ছয়টি পৌরসভা এবং ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট থমাস ও সেন্ট জন দ্বীপের বন্দরগুলোতে সব ধরনের নৌ চলাচল সীমিত করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ক্যাটাগরি-৪ ও ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার ঝড়ের সংখ্যা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা ২০২৫ সালের আটলান্টিক মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যক হ্যারিকেনের পূর্বাভাস দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অ্যারিনের এমন দ্রুত শক্তি অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়ার একটি বড় উদাহরণ।
আবহাওয়াবিদরা পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখছেন এবং বলছেন, ঝড়ের গতিবিধি ও চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আগাম ধারণা করা এখনো কঠিন। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য এবং কোনো রকম ঝুঁকি না নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








