আগুন নিয়ে খেলছেন পুতিন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

ফাইল ছবি
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়ালেও এর কোনো সুস্পষ্ট পরিসমাপ্তির লক্ষণ নেই। একদিকে রাশিয়ার আগ্রাসন ও সম্প্রসারিত হামলা, অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরোধ—এই দ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বেসামরিক ও সামরিক অবকাঠামো।
এমন পরিস্থিতিতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কূটনৈতিক অঙ্গন, এবার মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত মঙ্গলবার (২৭ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে বলেন, “পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, আমি না থাকলে রাশিয়ার সঙ্গে অনেক ভয়াবহ কিছু ঘটে যেত। সত্যিই ভয়াবহ কিছু।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে এসেছে। গত কয়েকদিনে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। সুমি অঞ্চলে চারটি গ্রাম দখল করেছে রুশ বাহিনী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, রাশিয়া রাতভর চালিয়ে যাচ্ছে এ ধরনের হামলা, যার ফলে সাধারণ নাগরিকেরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এর আগে গত রবিবার ট্রাম্প বলেন, পুতিন পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন। কিয়েভে টানা তিন রাতের বিমান হামলার জেরে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রাম্পের ভাষায়, আমি সবসময় পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছি, কিন্তু এখন তার মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশি যুবক নিহত
ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ‘আবেগতাড়িত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
তিনি বলেন, এই মন্তব্যগুলোকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। এগুলো আসলে আবেগের মাত্রাতিরিক্ত বহিঃপ্রকাশ।
এদিকে, রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেন, পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন—ট্রাম্পের এই মন্তব্যের একটাই অর্থ হতে পারে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আমি আশা করি, ট্রাম্প নিজেও সেটার পরিণতি বুঝতে পারছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য তার আগের অবস্থান থেকে একেবারে ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রায়ই তিনি পুতিনের প্রশংসা করতেন। কিন্তু এখন ইউক্রেন যুদ্ধের স্থবিরতা এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মস্কোর অনাগ্রহে তিনি দিন দিন বিরক্ত হচ্ছেন।
এদিকে, ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাও থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্রদের দাবি, রাশিয়া কৌশলগত সুবিধা নিতে সময়ক্ষেপণ করছে। তাদের আহ্বান, অবিলম্বে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথাও বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও সিএনএন। যদিও ট্রাম্প এ বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগও রেখেছেন।
বিশ্ব রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ এখন একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্তেজনার মাত্রা যদি বাড়তেই থাকে, তবে তা শুধু ইউক্রেন বা রাশিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি