News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৩১ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ০০:০৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

দুনিয়া তোলপাড় করা সেই ছবি

দুনিয়া তোলপাড় করা সেই ছবি

যুদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়ে গান পয়েন্টের বিভীষিকা থেকে একটি শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে আসা ছবির শিশুটি ক্যামেরার লেন্স আর বন্দুকের নিশানার পার্থক্য করতে পারেনি। ফটোগ্রাফারের তাক করা ক্যামেরাকে শিশুটি ভেবেছিল অস্ত্র। আর তাই সে সারেন্ডারের ভঙ্গি দুহাত ওপরে তুলে ধরে।  

যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবির থেকে এক তুর্কি ফটোসাংবাদিকের তোলা এই ছবিটি টুইটারে পোস্ট করার পরপরই ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে। দুহাত ওপরে তুলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শিশুটিকে দেখলে মনে হবে, সে দাঁড়িয়ে আছে গান পয়েন্টে বা অস্ত্রের মুখে। প্রথমবার টুইটের পর পরই হৃদয় তোলপাড় করা এ ছবিটি রি-টুইট হয়েছে এগার হাজার বারের বেশি। পরবর্তীতে ফেসবুক, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে।  

ওসমান সাগিরলি নামের ওই ফটোসাংবাদিক জানিয়েছেন, হুদিয়া নামের চার বছরের ছোট্ট মেয়েটির এই ছবি সিরিয়ার আতমেহ এলাকার একটি শরণার্থী শিবির থেকে গত বছর ডিসেম্বরে তোলা হয়েছিলো। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুর্কি সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হামা এলাকায় অবস্থিত নিজেদের বাড়ি-ঘর ফেলে হুদিয়া তার মা আর দু সহোদরের সঙ্গে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।

ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয় সাগিরলির ২৫ বছরের কর্মস্থল এক তুর্কি সংবাদপত্রে। প্রকাশের পরপরই তুরস্কের সোশ্যাল মিডিয়ায় এটির ব্যাপক প্রচার হয়। পরে গাজাভিত্তিক অপর এক ফটোসাংবাদিক নাদিয়া আবু শাবান ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেন। মূলত ছবিটি টুইট করার পরপরই মুহূর্তের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শেয়ারের পর শেয়ার আর কমেন্টের পর কমেন্ট এবং অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে সারা বিশ্বের সামনে দুহাত ওপরে তুলে ভয়ার্ত দৃষ্টি আর অভিমানের বোবা অভিব্যক্তি নিয়ে হাজির হয় হুদিয়া।

সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টিকারী ছবিটি টুইট করার সময় ফটোগ্রাফারের নাম জানতেন না বলে তা উল্লেখ করতে পারেননি নাদিয়া। ফলে ফটোগ্রাফারের নাম বা ক্রেডিট না থাকায় এক পর্যায়ে  ছবিটির সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিলো।

এ পরিস্থিতিতে বিবিসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ছবিটির ইতিবৃত্ত। বর্তমানে তানজানিয়ায় কর্মরত ওসমান সাগিরলির তোলা ছবিটির সত্যতা নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই। ছবিটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত করে হৃদয় বিদীর্ণকারী বোবা অভিব্যক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটির পরিচয়ও জানান তিনি।

শিশুরা নিঃস্বার্থভাবেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে জানিয়ে ওসমান সাগিরলি বিবিসিকে বলেন, “সাধারণত শিশুরা ক্যামেরা দেখলে মুখ লুকিয়ে ফেলে বা হেসে দৌড় দেয়।”

আলোচিত এই ছবিটি তুলতে একটি টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করেছিলেন সাগিরলি। তিনি বলেন, “সে এটিকে একটি অস্ত্র ভেবেছিলো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম শিশুটি ভয় পেয়েছে। ছবিটি নিয়ে আমি দেখলাম কারণ সে তার ঠোঁট কামড়ে হাত ওপরে তুলেছিলো।”

বিবিসির অনুসন্ধানে ছবিটির ফটোগ্রাফারসহ সত্যতা নিশ্চিত করা গেলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতায় দুই হাত ওপরে তুলে সারা বিশ্বের সামনে স্যারেন্ডারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা শিশু হুদিয়া কবে মা আর তার দুই সহোদরাকে নিয়ে কবে নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারবে অথবা আদৌ ফিরবে কি না, তা অনিশ্চিত।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসজে/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়