যুদ্ধবিরতিতে বাড়িতে ফিরছেন গাজার মানুষ
ছবি: সংগৃহীত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যেতে শুরু করলে মানুষজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করেন।
গাজার সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উপকূলবর্তী সড়কে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। সমুদ্র ঘেঁষা আল-রশিদ সড়কে সারারাত অপেক্ষার পর ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাওয়ার পর মানুষরা দলে দলে গাজার উত্তরাঞ্চলের বিধ্বস্ত বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেন।
গাজার আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি সতর্কতা নির্দেশনা জারি করেছে।
আইডিএফের মুখপাত্র কর্নেল আভিচায় আদরি বিবৃতিতে গাজার মানুষদের সতর্ক করে বলেছেন, যে সব এলাকায় তাদের সেনারা এখনও অবস্থান করছে, সেখানে কোনো বেসামরিক মানুষ যেন না যায়।
টাইমস অব ইসরায়েল সূত্রে জানা গেছে, গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সেনারা সরে গেলেও উপত্যকাটির প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনও ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তে ইসরায়েলের তৈরি বাফার জোন, যেখানে অসংখ্য বাড়িঘর ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি সেনারা গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডর, উত্তরাঞ্চলের বেইত হানুন, বেইত লাহিয়া, এবং দক্ষিণাঞ্চলের রাফা ও খান ইউনিসের বেশিরভাগ অংশে এখনও অবস্থান করছেন। আইডিএফ জানিয়েছে, এসব এলাকায় গেলে চরম বিপদে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকার ৪০ বছর বয়সী বাসিন্দা ইসমাইল জায়দা রয়টার্সকে বলেছেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমার বাড়িটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু চারপাশ ধ্বংস হয়ে গেছে; প্রতিবেশীদের বাড়িঘরসহ পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করল ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত থাকা ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেবে। এছাড়াও, যুদ্ধ চলাকালীন গাজায় আটক থাকা প্রায় ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় শত শত ট্রাক ভর্তি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে ভাষণে বলেছেন, “গাজা সামরিকীকরণমুক্ত হবে এবং হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে; তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অবস্থান করবে। যদি এটি সহজে সম্ভব হয় তবে ভালো, নইলে কঠিন উপায়ে সম্পন্ন হবে।”
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে কিছু ইসরায়েলি সেনা সীমান্ত সংলগ্ন পূর্বাঞ্চল থেকে সরে গেছে। তবে গাজার কেন্দ্রে নুসিরাত ক্যাম্পে কিছু সেনা পূর্ব ইসরায়েল সীমান্তের দিকে সরানো হয়েছে। ভোরের দিকে গোলাগুলির শব্দের পর কিছু সেনা তাদের অবস্থানে রয়ে গেছে। গাজার দিকে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর রাস্তা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে গেছে।
গাজার বাসিন্দা মাহদি সাকলা বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির খবর শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা খুব খুশি হয়ে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। যদিও সেখানে কোনো বাড়ি নেই, সব ধ্বংস হয়েছে, তবুও ধ্বংসস্তূপের ওপর ফিরে আসতেও আনন্দিত।” দুই বছর ধরে তারা বিভিন্ন স্থানে বাস্তুচ্যুত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
হামাসের নির্বাসিত গাজা প্রধান খলিল আল-হায়া জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা পেয়েছেন।
এই সংঘাতের ফলে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ইরান, ইয়েমেন ও লেবানন জড়িত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর চুক্তি সম্পাদনের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন।
এই যুদ্ধে প্রায় ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি তালিকা প্রকাশ এবং ধ্বংসস্তূপ হওয়া গাজার শাসনভার কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। হামাস এখনও ইসরায়েলের নিরস্ত্রীকরণের দাবি মেনে নেনি।
সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








