News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ১০ অক্টোবর ২০২৫

শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো

শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা ও মানবাধিকারকর্মী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টা, শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক রূপান্তরের নেতৃত্ব এবং ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক উত্তরণের অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকার জন্য তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়) নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছরের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।

নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। নিজের জীবনের গুরুতর হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশ ছাড়েননি, বরং জনগণের পাশে থেকে তাদের সংগঠিত করেছেন। এই দৃঢ়তা ও নেতৃত্ব ভেনেজুয়েলার লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সমাজের সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের পক্ষে অটল থেকেছেন।

প্রকৌশলী থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৫৭ বছর বয়সী মাচাদো দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরকারের কড়া সমালোচক এই নেত্রী দেশটির গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিসরেও পরিচিত।

নরওয়েজিয়ান কমিটি বলেছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তার নিরলস প্রচেষ্টা এবং স্বৈরতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সংগ্রামের জন্য মাচাদোকে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং গণমাধ্যমে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই গৌরব অর্জন করেছেন ভেনেজুয়েলার এই নারী রাজনীতিক।

নোবেল কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন: ধাতু–জৈব কাঠামোর উদ্ভাবনে রসায়নে নোবেল তিন বিজ্ঞানীর

২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলার শিকারদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নিহন হিদানকিও, যারা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের আন্দোলনে কাজ করছে। তার আগের বছর (২০২৩) পুরস্কার পান ইরানের কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।

নোবেল কমিটি জানায়, ১৯০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১১৪ বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১১ জন ব্যক্তি ও ৩১টি সংস্থা মিলে মোট ১৪২টি পুরস্কার পেয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি তিনবার (১৯১৭, ১৯৪৪, ১৯৬৩) এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তর দুইবার (১৯৫৪ ও ১৯৮১) পুরস্কার লাভ করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।

ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই—মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ২০১৪ সালে। অপরদিকে, সবচেয়ে প্রবীণ নোবেলজয়ী হলেন ব্রিটিশ-পোলিশ পদার্থবিজ্ঞানী জোসেফ রোটব্লাট, যিনি ১৯৯৫ সালে ৮৬ বছর বয়সে এই সম্মান লাভ করেন।

প্রথা অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

  • চিকিৎসাবিজ্ঞান: ৬ অক্টোবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পান মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল, ও শিমন সাগাগুচি—পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে গবেষণার জন্য।
  • পদার্থবিজ্ঞান: ৭ অক্টোবর ঘোষিত পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৫ সালের পুরস্কার পান মার্কিন বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট, ও জন এম. মার্টিনিস—বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও শক্তি পরিমাপ আবিষ্কারের জন্য।
  • রসায়ন: ৮ অক্টোবর রসায়নে নোবেল পান জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড রবসন, ও যুক্তরাষ্ট্রের ওমর এম. ইয়াঘি—ধাতু-জৈব কাঠামোর (Metal-Organic Frameworks) উদ্ভাবনের জন্য।
  • সাহিত্য: ৯ অক্টোবর সাহিত্যে নোবেল পান হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই, তার মনোমুগ্ধকর ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ।

সূচি অনুযায়ী, আসছে ১৩ অক্টোবর (রবিবার) সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

সবশেষে, আগামী ১০ ডিসেম্বর—ডিনামাইটের আবিষ্কারক ও নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল-এর মৃত্যুবার্ষিকীতে—স্টকহোম ও অসলোতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

প্রতিটি পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, একটি স্বর্ণপদক ও মানপত্র। ২০২৩ সালে সুইডিশ ক্রোনারের মূল্যস্ফীতির কারণে পুরস্কারের অর্থ ১০ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি করে ১১ মিলিয়ন ক্রোনা নির্ধারণ করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়