ধাতু–জৈব কাঠামোর উদ্ভাবনে রসায়নে নোবেল তিন বিজ্ঞানীর
ছবি: সংগৃহীত
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস জানায়, এই তিন বিজ্ঞানী এমন এক নতুন ধরনের আণবিক স্থাপত্য তৈরি করেছেন যার মধ্যে দিয়ে গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। এই ধাতু–জৈব কাঠামো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক সম্ভাবনা তৈরি করেছে—যেমন মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ, কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হেইনার লিঙ্কে বলেন, ধাতু–জৈব কাঠামো অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা এখন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপযোগী উপকরণ নিজেরাই নকশা করতে পারছেন। এই সাফল্য ভবিষ্যতে মানবজাতির বড় কিছু সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিজ্ঞানীরা যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিবেশগত ও শিল্পক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োগের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে—যেমন পানির মধ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পিএফএএস আলাদা করা, পরিবেশে থাকা ওষুধের অবশেষ ভেঙে ফেলা কিংবা মরুভূমির বাতাস থেকে আর্দ্রতা আহরণ।
সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa)
১৯৫১ সালে জাপানের কিয়োটো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রিচার্ড রবসন (Richard Robson)
১৯৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসবার্নে জন্ম। ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
ওমর এম. ইয়াগি (Omar M. Yaghi)
১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: পদার্থে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী
এ বছর নোবেলজয়ীরা পাবেন একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদপত্র এবং ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা)। কোনো বিভাগে একাধিক বিজয়ী থাকলে পুরস্কারের অর্থ সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোম ও অসলোতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। প্রতিটি বিজয়ীর হাতে ১১ মিলিয়ন ক্রোনারের চেক, একটি মানপত্র ও একটি স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির কারণে প্রাইজ মান ১০ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি করে ১১ মিলিয়ন ক্রোনার করা হয়েছিল।
প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী—
- ৬ অক্টোবর: চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাগাগুচি—পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য।
- ৭ অক্টোবর: পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিস—বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও শক্তি পরিমাপ আবিষ্কারের জন্য।
- ৮ অক্টোবর: রসায়নে কিতাগাওয়া, রবসন ও ইয়াগি।
- ৯ অক্টোবর: সাহিত্যে বিজয়ীর নাম ঘোষণা হবে বিকেল ৫টায়।
- ১০ অক্টোবর: শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে বিকেল ৩টায়।
- ১৩ অক্টোবর: অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে।
বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে সুইডিশ বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল-এর নামে। ঊনবিংশ শতকের এই বিজ্ঞানী ডিনামাইট আবিষ্কার করে বিপুল অর্থের মালিক হন। মৃত্যুর আগে তিনি উইলে উল্লেখ করেন, তার সম্পত্তি থেকে প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্য—এই পাঁচ খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান। পরে ১৯৬৮ সালে দ্য ব্যাংক অব সুইডেন–এর বিশেষ উদ্যোগে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রবর্তিত হয়, যা বর্তমানে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য মর্যাদা পেয়ে এসেছে।
এখন পর্যন্ত রসায়নে ১১৬ বার নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এ ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে ২০১৮ সালে ৯৭ বছর বয়সে নোবেল জেতেন জন বি. গুডএনাফ, আর সবচেয়ে কম বয়সে ১৯৩৫ সালে ৩৫ বছর বয়সে জয়ী হন ফেদ্রিক জোলিয়ট।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








