মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে ২,৫০০ স্টারলিংক কিট নিষ্ক্রিয়
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধভাবে পরিচালিত স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে ব্যবহার হওয়া আড়াই হাজারেরও বেশি স্টারলিংক ডিভাইসের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।
কোম্পানিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার বুধবার (২২ অক্টোবর) এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এএফপি ও বিবিসি-সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
মিয়ানমারের থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মিয়াওয়াড্ডি এলাকায় গড়ে ওঠা ‘কেকে পার্ক’ নামের একটি বৃহৎ স্ক্যাম সেন্টারে গত সোমবার অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযান চলাকালে শত শত মানুষ সেন্টার থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় ২ হাজারের বেশি আটককর্মীকে মুক্ত করা হয় এবং অন্তত ৩০টি স্টারলিংক ডিভাইস জব্দ করা হয়। প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, সেন্টারের ছাদে অসংখ্য স্যাটেলাইট ডিশ স্থাপন করা ছিল।
এছাড়া, এ অঞ্চলটি ‘রোমান্স স্ক্যাম’ ও ‘পিগ বুচারিং’ অনলাইন প্রতারণার জন্য কুখ্যাত। ‘পিগ বুচারিং’ হলো অনলাইনে মিথ্যা সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগ ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত চীনের অপরাধীরা এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে।
স্পেসএক্সের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রধান লরেন ড্রেয়ার এক্সে (আগের টুইটার) জানান, মিয়ানমারের সন্দেহভাজন স্ক্যাম সেন্টারের আশেপাশে থাকা ২ হাজার পাঁচ’শর বেশি স্টারলিংক কিট শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আমরা চাই স্টারলিংক প্রযুক্তি মানবকল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হোক এবং অপরাধীরা যেন এর অপব্যবহার করতে না পারে।
স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। স্পেসএক্স জানিয়েছে, তারা অবৈধ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার পর এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন: বয়স্ক ব্যবহারকারীদের স্ক্যাম থেকে বাঁচাতে নুতন ফিচার আনলো মেটা
মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, স্টারলিংকের মতো স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন এলাকায় সক্রিয় অপরাধচক্রগুলোকে সহজে পরিচালনা করতে সাহায্য করছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এ ধরনের স্ক্যাম সেন্টারগুলো এখন তাদের যুদ্ধকালীন অর্থনীতির একটি বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
মিয়াওয়াড্ডি অঞ্চলের স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষকে চাকরির প্রলোভনে আনা হয় এবং অনলাইন প্রতারণা, প্রেমের ফাঁদ, ভুয়া বিনিয়োগ প্রকল্পের মতো অপরাধমূলক কাজ করানো হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব কর্মকাণ্ড থেকে প্রতিবছর কয়েক দশক বিলিয়ন ডলার আয় হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতেও উদ্ধার হওয়া কয়েকজন কর্মী এএফপিকে জানিয়েছিলেন, তারা থাইল্যান্ডের মাধ্যমে পাচার হয়ে স্ক্যাম সেন্টারে পৌঁছেছেন। সেখানে তাদের মারধর ও নির্যাতন করা হতো। চীনের অভিনেতা ওয়াং জিংও ভুয়া অডিশনের প্রলোভনে গিয়ে একটি স্ক্যাম সেন্টারে পাচার হন এবং পরে উদ্ধার হন।
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৩০টি স্ক্যাম সেন্টার এখনও সক্রিয়। স্থানীয় মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব কেন্দ্রগুলোতে স্টারলিংক সেবা বন্ধ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এফপি ও বিবিসির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযানের সময় শত শত মানুষ হেঁটে সেন্টার ছাড়ছেন।
ড্রেয়ার বলেন, স্টারলিংকের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী সংযোগ বাড়ানো, তবে সেই সঙ্গে এটি যেন বিশ্বাসযোগ্য ও নৈতিক ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, সেই নিশ্চয়তাও আমরা দেব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








