মোহাম্মদপুর ওসির অপসারণ রোধে মাদকচক্র ও কিশোর গ্যাংয়ের মানববন্ধন

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাং, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী ইফতেখার হাসানের অপসারণ দাবি করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা গত ২৫ জুলাই থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
এ ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ২৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টায় টাউন হল জান্নাত হোটেলের সামনে ওসির পক্ষে মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যরা। তাদের বক্তব্য ছিল, ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার।
মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হলেও মামলাটি থানার নথিতে নেই।
অভিযোগ উঠেছে, ওসির নির্দেশে মাদক মামলার খসড়া তৈরি করা হলেও তা আর রুজু হয়নি, যা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।
মামলার প্রধান আসামী আটক সাদ্দামের নামে মাদক মামলার ওয়ারেন্ট থাকলেও তাকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়নি। এ ঘটনায় কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করলে সেটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুর থানা: ওসির ছত্রছায়ায় অস্ত্র-মাদক-ঘুষের রাজত্ব
মানববন্ধনে যারা ছিলেন
- ইকবাল (কসাই ইকবাল): জেনেভা ক্যাম্পের ৬/২৪ রোডে মাদক স্পট পরিচালনাকারী, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বিল্লালের বড় ভাই, যার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
- মমতাজ আশরাফী: শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেলের আত্মীয় ও তার সকল মাদক ব্যবসা দেখভালকারী।
- খোকন: জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিমের শ্যালক, গজনবী রোডে মাদক বিক্রির স্পট পরিচালনা করেন।
- ইরফান (চারকু ইরফান): জেনেভা ক্যাম্পের ৮ নম্বর সেক্টরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
- রুবেল (ইয়াবা রুবেল): ২ নম্বর সেক্টরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
- সকিনা: এক সময়ের শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ী, মানববন্ধনে মহিলাদের নেতৃত্ব দেন।
- বেচু (ল্যাংড়া বেচু): ২ নম্বর সেক্টরের মাদক ব্যবসায়ী।
- অন্যান্য নারী মাদক ব্যবসায়ী।
মানববন্ধনে আরও অংশগ্রহণ করেন শীর্ষ কিশোর গ্যাং ‘কবজি কাটা গ্রুপ’ এর সদস্যরা।
নবোদয় এলাকার রাকিব (হাতভাঙা রাকিব), এলেক্স সুমনের ছোট ভাই এবং গ্যাং সদস্য ফাহাদ ও নীরব তাদের মধ্যে ছিলেন। তাদের সবাই মোহাম্মদপুর থানায় মাদকসহ একাধিক মামলার মুখে রয়েছে।
মানববন্ধনে মমতাজ আশরাফী বলেন, ওসি সাহেবের বিরুদ্ধে অপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি। পুলিশ জনগণের বন্ধু। তাদের কাজকর্মে যদি ভুল হয়, তারা তদন্ত করবে। জনগণ পুলিশের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ করবে না। ওসি আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। পুলিশকে শত্রু ভাবা যাবে না, আমাদের বন্ধু হিসেবে নিতে হবে।
বেচু (ল্যাংড়া বেচু) বলেন, ওসি সাহেব ভালো লোক। আমরা সবসময় তাকে এই থানায় দেখতে চাই।
রাকিব (হাতভাঙা রাকিব) যোগ করেন, আমরা চাই ওসি স্যার সবসময় এই থানায় থাকুক।
ফাহাদ বলেন, ওসি স্যার সব সময় আমাদের পাশে থাকেন। আমরা তার পাশে আছি।
মোহাম্মদপুর থানায় ওসি মোহাম্মদ আলী ইফতেখার হাসানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ এবং তার পক্ষে গ্যাং ও মাদক ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন ঘটনার পেছনে জটিল রাজনৈতিক, সামাজিক ও অপরাধজগতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনমত বিভক্ত। একদিকে সাধারণ ছাত্র-জনতা ও সুশীল সমাজ ওসির অপসারণ দাবি করছে, অপরদিকে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা তাকে সমর্থন জানাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি