বাজেটের সমালোচনায় আশফাক নিপুণ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন।

বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তাবিত শুল্ক-কর কার্যকর হওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে নানা উদ্বেগ। নতুন করে শুল্কের আওতায় এসেছে দেশের ক্রমবর্ধমান ও জনপ্রিয় ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এবার ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখার খরচ বাড়বে—এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুণ এই শুল্ক আরোপকে ‘অপেক্ষাকৃত নতুন শিল্পে আঘাত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিস্তারিত প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

তার ভাষায়, বাংলাদেশে ওটিটি সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ও আচরণ নিয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য কি আছে অর্থ উপদেষ্টার কাছে? উনি জানেন কি, আমাদের কনটেন্টের বড় একটি অংশ পাইরেসির মাধ্যমে দেখা হয়?

নিপুণের মতে, পাইরেসির বিরুদ্ধে সরকার গত কয়েক বছরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, অথচ বৈধ প্ল্যাটফর্মে কর বসিয়ে যেন উল্টো অবৈধ ব্যবস্থাকেই উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। 

বিশ্বের অনেক দেশে নতুন শিল্পকে কর রেয়াত দিয়ে উৎসাহিত করা হয়, আর আমরা মাত্র ৫ বছরের মাথায় শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছি, বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: ফোন ছাড়াই সাত-আট মাস কাজ করেছেন শরিফুল রাজ

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এই অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ নির্মাণ বাজেট কমাবে, কনটেন্টের মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অনেক দর্শক বৈধ সাবস্ক্রিপশন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ফলে পাইরেসির প্রবণতা আরও বাড়বে এবং পুরো শিল্প-অর্থনীতি সংকুচিত হবে।

নিপুণের পোস্টটি শেয়ার করে নির্মাতা আদনান আল রাজীব আরও একধাপ এগিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের অনেক মেধাবী শিল্পী বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হবেন।

তিনি লিখেছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিল্পীরা তাদের দক্ষতা বিকাশের জন্য এমন পরিবেশ খুঁজবেন, যেখানে সৃজনশীলতাকে সুযোগ ও প্রণোদনায় পুষ্ট করা হয়—শুল্কে দমন নয়।

গত কয়েক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা ও নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। নতুন ধরণের গল্প, সাহসী নির্মাণ এবং স্বাধীন চিন্তার প্রকাশে এই মাধ্যমটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই খাতে কর বসানোর সিদ্ধান্ত একপ্রকার “অন্তর্নিহিত শিল্প শত্রুতা”। বাজেট বাস্তবায়নের আগেই পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বিশ্লেষকদের মতে, কাঠামোগত দুর্বলতা, নীতিগত অসঙ্গতি ও অব্যবস্থাপনা না সরিয়ে শুল্ক আরোপ করলে, স্বল্প মেয়াদে সরকার রাজস্ব পেলেও দীর্ঘমেয়াদে শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে, যা অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।