News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১২ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ সায়েন্স ল্যাব, তীব্র ভোগান্তি

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ সায়েন্স ল্যাব, তীব্র ভোগান্তি

ছবি: সংগৃহীত

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠদান অব্যাহত রাখার দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে নিউমার্কেট–ধানমন্ডি–এলিফ্যান্ট রোড–মিরপুর রোড সংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা। 

রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। 

তারা হাতে ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ বন্ধ না করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়, তবে শিক্ষার্থীরা অনড় থাকেন। 

তাদের দাবি, সরকারের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না।

রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। তাদের দাবি ও অবস্থান বোঝার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা চেষ্টা করছি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সম্প্রতি সাত সরকারি কলেজকে একত্র করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণার ফলে ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই এখানে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ ছিল। কিন্তু এখন সাত কলেজ সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে আমরা ভয় পাচ্ছি যে এইচএসসি পর্যায়ের ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। আমরা চাই সরকার এই বিভাগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক।

আরও পড়ুন: ৩ দফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান

আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আন্দোলন করছি না। এটা আমাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিক যে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ বন্ধ হবে না।

চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে সমন্বয় করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তাবিত নাম নির্ধারণ করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আসছে—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ প্রণয়নের মাধ্যমে সাত কলেজের সমন্বিত প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব সিনেট, সিন্ডিকেট ও পৃথক ভর্তি নীতি থাকবে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর আব্দুল গণি রোড ও কলেজ রোড সংলগ্ন শিক্ষা ভবনের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে।

এর ফলে শিক্ষা প্রশাসনের দুই স্তরে—বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর ও উচ্চমাধ্যমিকের অস্তিত্ব রক্ষাকে ঘিরে—এক ধরনের বিভক্তি ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, আমরা চাই না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ চলছে। তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানায়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।

বর্তমানে সায়েন্স ল্যাব এলাকা ও এর আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত সড়ক আংশিকভাবে অবরুদ্ধ থাকায় ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।

সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সিদ্ধান্তে যেমন উচ্চশিক্ষার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তেমনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ টিকে থাকবে কি না, তা এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রধান উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়