৩ দফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান

ছবি: সংগৃহীত
মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে আগত বিপুলসংখ্যক শিক্ষক অংশ নিয়েছেন।
এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’। সংগঠনটির ব্যানারে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। সরকারের ঘোষিত বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিকে আমরা অপ্রতুল ও অবাস্তব মনে করি। আজ সন্ধ্যার মধ্যে দাবি না মানা হলে আমরা রাতেও সড়কে অবস্থান করব এবং সারাদেশে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আজকের কর্মসূচি শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।
ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এতে পল্টন থেকে হাইকোর্টের কদম ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন।
এদিকে, আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন এনসিপির কয়েকজন নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত।
গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ৫০০ টাকা
কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে।
রংপুর থেকে আসা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়েই রাজপথে নেমেছি।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের নয়াচর ফাজিল মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুদ পারভেজ বলেন, জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। সরকার আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। বাড়িভাড়া বাবদ মাত্র ৫০০ টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে, যা হাস্যকর।
১৩ আগস্টের সমাবেশের পর ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে শিক্ষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এবার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে জোট।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মূল বেতনের শতাংশ হারে ভাতা প্রদানের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, যেখানে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণের প্রস্তাব ছিল।
বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩,৯৮,০৬৮ জন। তাদের বাড়িভাড়া বাবদ বছরে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ৩৫৭ কোটি এবং কলেজ পর্যায়ে ১১২ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পেতেন, যা সম্প্রতি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে বছরে ২২৯ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বাড়তি চাপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য টেনশনের বিষয়। মার্চ-এপ্রিল থেকে বেতন স্কেল কার্যকর করা হলেও জুন পর্যন্ত বাড়তি বেতনের টাকা চলতি বাজেট থেকেই সংস্থান করতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি