News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১০ অক্টোবর ২০২৫

দশমিনায় মাদকাসক্ত যুবকের কোপে শিশু নিহত, আহত ৬

দশমিনায় মাদকাসক্ত যুবকের কোপে শিশু নিহত, আহত ৬

ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় মাদকাসক্ত এক যুবকের এলোপাতাড়ি কোপে নারী ও শিশুসহ ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গাছের মগডাল থেকে নামিয়ে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরহোসনাবাদ গ্রামের মৃধা বাড়িতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। 

নিহত শিশুর নাম সাফায়েত হোসেন (৮)। সে একই এলাকার জামাল ব্যাপারী ওরফে জামাল হোসেনের ছেলে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন—মুহিত হাসান (৮), তার মা মোছা. মরিয়ম (২৮), পঞ্চম আলী সরদার (৪৭), বাবুল সরদার (৪৭) এবং মোছা. নাছিমা বেগম (৩২)। তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা ও পরস্পরের প্রতিবেশী।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত সবুজ মৃধা (৩০) পালিয়ে গিয়ে প্রায় ৭০ ফুট উঁচু একটি চাম্বল গাছের মগডালে আশ্রয় নেয়। পরে চার ঘণ্টার চেষ্টায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ তাকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আটক করে।

দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল আলীমবলেন, সবুজ মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন। সে গাছের মগডালে থাকা অবস্থায় নিজের হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার পর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনো প্রকার পূর্বশত্রুতা ছাড়াই সবুজ মৃধা আচমকা একই বাড়ির বাসিন্দাদের ওপর দা নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। তার হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ছয়জন রক্তাক্ত হন। ভুক্তভোগীদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে মসজিদের চাবি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫০, বাড়িঘর ভাঙচুর

কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত সাফায়েত, মুহিত ও মরিয়মকে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পথে বাউফল উপজেলার বগা ফেরিঘাট এলাকায় সাফায়েতের মৃত্যু হয় বলে নিহতের বাবা জামাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জামাল বলেন, আমার ছেলে সাফায়েতকে বাঁচানো গেল না। বরিশাল হাসপাতালে নেওয়ার পথে ও মারা যায়।

অন্যদিকে মুহিত ও তার মা মরিয়মকে বরিশালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত পঞ্চম আলী, বাবুল সরদার ও নাছিমা বেগম দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সবুজ দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তার আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই একই বাড়ির নারী ও শিশুসহ ছয়জনকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।

তিনি আরও বলেন, আহতদের মধ্যে তিনজনকে আমরা দ্রুত বরিশাল পাঠাই। সাফায়েত পথে মারা যায়। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির চৌকিদার জানান, সবুজ মাদকাসক্তির কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে। পরে ভয়ে গাছের মগডালে উঠে যায় এবং এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে অবস্থান বদলাতে থাকে।

দশমিনা ফায়ার সার্ভিসের অধিনায়ক আনোয়ার হোসেন জানান, সবুজ প্রাথমিকভাবে ৬৫ থেকে ৭০ ফুট উঁচু একটি চাম্বল গাছে আশ্রয় নেয়। সে বারবার গাছ পরিবর্তন করতে থাকে, তাই পালানো ঠেকাতে চারটি গাছ কাটা হয়। চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে নিরাপদে নিচে নামানো হয়।

তিনি আরও বলেন, গাছ থেকে নামার সময় সবুজ নিজেও আহত ছিল। এরপর পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।

ওসি আবদুল আলীম বলেন, নিহত শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিহত সাফায়েতের চাচা আনছার মৃধা বলেন, আমরা আইনের আশ্রয় নেব। তবে কিছুটা সময় লাগবে কারণ লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে চরহোসনাবাদ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবুজের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়