গরম-অন্ধকারের যুদ্ধে একা লিলিমন, ২০ বছর বিদ্যুৎবিহীন জীবন

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার পূর্ব সড়াইল গ্রামে ভাঙা টিনের ঘরে বসে আছেন ৫৫ বছরের স্বামী পরিত্যক্তা লিলিমন বিবি। বাইরে তীব্র রোদ, ভেতরে হাঁসফাঁস করা গরম আর গাঢ় অন্ধকার। আধুনিক যুগের আলো ঝলমলে সময়ে তিনি যেন আলাদা এক পৃথিবীতে বন্দি—যেখানে নেই বিদ্যুতের আলো, নেই বৈদ্যুতিক পাখার সামান্য বাতাস। গত ২০ বছর ধরে এমন অমানবিক জীবনযাত্রার সাথে যুদ্ধ করেই কাটাচ্ছেন তার প্রতিটি দিন ও রাত।
দিনে হিমাগারে নষ্ট আলু বাছাই করেন, কখনোবা অন্যের ঘরে ঝি-এর কাজ করেন। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে হাতে আসে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ টাকায় কোনোরকমে ভাতের জোগান হয়, কিন্তু ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া তার কল্পনারও বাইরে। তাই রাত নামলে ভরসা কেবল টিমটিমে কুপি কিংবা হারিকেন।
কিন্তু এ অন্ধকার শুধু চোখকে ঘিরে ধরে না, লিলিমনের মনেও নেমে আসে ভয়। তিনি বলেন—“অন্ধকারে একা থাকি, মাঝে মাঝে ভয় লাগে খুব। যদি বিদ্যুৎ থাকতো, অন্তত শেষ বয়সে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম। গরমে হাঁসফাঁস করতে হতো না, রাতগুলো এত ভারী লাগতো না।”
গ্রামবাসীরাও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ ফি ও মাসিক বিল পরিশোধ করা লিলিমনের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ এই বিদ্যুৎ থাকলে তার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হতো। তাদের দাবি, সমাজের বিত্তবান ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।
৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার রেজাউল ইসলাম বলেন, “আমি শুনেছি তিনি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ভাঙা টিনের ঘরে থাকেন, যা অত্যন্ত কষ্টকর। তিনি চাইলে আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।”
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান জানান, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা লিলিমন বিবির কথা জেনেছি। সরকারি বয়স্কভাতা তিনি পান, কিন্তু বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আমরা দ্রুত পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করব, যেন তার বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়।”
আরও পড়ুন: মন্দির থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত
গ্রামের অন্ধকারাচ্ছন্ন ছোট্ট সেই ভাঙা টিনের ঘরে হয়তো লিলিমনের স্বপ্নও আটকে আছে। একটু বিদ্যুৎ, একটু বাতাস, একটু আলো—এই ছোট্ট প্রাপ্তিই তার জীবনের শেষ বয়সকে শান্তির ছায়া দিতে পারে। সমাজের সামান্য সহমর্মিতা হয়তো তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে আলো ও নিরাপত্তার আশ্বাস।