জুলাইয়ে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ৩৩.৫২%

ফাইল ছবি
চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনেই বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন ২০৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ হাজার ৬০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ আয় বেড়েছে ৫২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ৩৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।
সোমবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চলতি মাসের ২৭তম দিন রবিবার একদিনেই দেশে এসেছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাইয়ের বাকি চার দিনেও রেমিট্যান্সের এ গতি অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয় ২৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি হবে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই রেমিট্যান্স প্রবাহে এক শক্তিশালী সূচনা।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধি সম্পর্কে আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের নানা উদ্দীপনা ও হুন্ডি প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে এক ধরনের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই ২০২৪–জুন ২০২৫) পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ এ পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: এক বছরে রেকর্ড ৪০৮ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ শোধ
পূর্ববর্তী অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সের পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো—
মাস প্রবাসী আয় (কোটি মার্কিন ডলার)
জুলাই ১৯১.৩৭
আগস্ট ২২২.১৩
সেপ্টেম্বর ২৪০.৪১
অক্টোবর ২৩৯.৫০
নভেম্বর ২২০.০০
ডিসেম্বর ২৬৪.০০
জানুয়ারি ২১৮.৫২
ফেব্রুয়ারি ২৫২.৭৬
মার্চ ৩২৯.৫৬
এপ্রিল ২৭৫.২৩
মে ২৯৬.৯৫
জুন ২৮২.১২
এর মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৫ সালের মার্চ মাসে—৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর পরপরই মে মাসে আসে ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। হুন্ডি চক্র নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে দ্রুত হস্তান্তর এবং রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনার বাস্তব প্রয়োগ এ প্রবাহ বাড়িয়েছে।
এক কর্মকর্তা জানান, আমরা এখন প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মতো রেমিট্যান্স পাচ্ছি, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সরাসরি অবদান রাখছে এবং আমদানি ব্যয় সামাল দিতে সহায়তা করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধারাবাহিক রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ডলারের জোগানে স্বস্তি এসেছে, মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে এবং আমদানি–রপ্তানি ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি