বাঙালের ভারতদর্শন
তামিলদের ভাষা ও আমাদের ভাসা ভাসা জানার অভিজ্ঞতা
বাধ্যতামূলক একটা দীর্ঘ বিরতি মেনে নেওয়ার পর আবারও মনে হলো বাকি আরও কিছু ছিল যা শেয়ার করা যায়। অন্তত যারা এই ভ্রমণ সিরিজটিকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য সাহস ও সহযোগিতা করেছেন –তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার একটি বিষয় তো আছেই, তাই এ প্রচেষ্টা-
তামিলদের নিজস্ব ভাষা আছে, আছে নিজস্ব বর্ণমালা এবং এই ভাষাতেই আছে অসংখ্য বই, যা আমরা এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্না লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখেছি, দেখেছি মাদ্রাস ইউনিভার্সিটির নিজস্ব লাইব্রেরিতেও। কথা প্রসঙ্গে মাদ্রাস লাইব্রেরির এক কর্মকর্তা জিজ্ঞাসার জবাবে বলেছিলেন, প্রায় এক লাখ বিশ হাজার বই ইতিমধ্যেই তারা পিডিএফ ফর্মেটে নিয়ে এসেছেন, বাকিগুলোর কাজ চলছে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে বাইরের পড়ুয়ারাও বই পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন – যা অনেকটা বিরল ঘটনার মতোই। তামিল ভাষা দ্রাবিড়িয়ান ভাষা হতে সৃষ্টি হয়েছে। তামিল ভাষার ভাই-বোন হলো মালায়লাম, তেলেগু ও কানাড়া। যেমন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আত্মীয় স্বজন হলো বাংলা, হিন্দি ইত্যাদি।
আমার কাছে মনে হতো উৎপত্তির দিক থেকে বাংলা ও তামিল ভাষার মধ্যে কোনো মিল থাকার সম্ভাবনা নেই, থাকার কথাও নয়। কিন্তু চেন্নাইয়ের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানোর সময় আমি কিছু শব্দ দেখতে পাই যেগুলো বাংলা শব্দের অনুরূপ। আমি ধরে নিয়েছিলাম এগুলোর উচ্চারণ বাংলার মতো হলেও হয়তো অর্থ ভিন্ন হবে। তারপর আমি এগুলোর অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছি এবং অবাক হয়েছি কিভাবে এই শব্দগুলো প্রায় ২৫০০ কি.মি দূরে, মাঝে একটি উপসাগর রেখে দুই অঞ্চলে একই অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংস্কৃত শব্দ থেকে উৎসারিত শব্দ, যে শব্দগুলোর উচ্চারণে পার্থক্য সামান্য থাকলেও অর্থের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলা ও তামিল শব্দাবলীর কয়েকটি এখানে তুলে ধরার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। এখানে যেসব শব্দের পাশে বন্ধনীবদ্ধ শব্দ রয়েছে সেগুলোর উচ্চারণে সামান্য পার্থক্য থাকলেও যেগুলোর পাশে বন্ধনীবদ্ধ শব্দ নেই সেগুলোর উচ্চারণ একই। যেমন: সুথাই (শুদ্ধ), রাকসা (রক্ষা), সারু (সুরা), অদৃষ্টা (অদৃষ্ট), অপরাধা (অপরাধ), অন্যায়া (অন্যায়), অমাবস্যায়া (অমাবস্যা), অমানুষ্যা (অমানুষ), অলংকারা (অলংকার), অলক্ষ্যায়া (অলক্ষ),অনাথা (অনাথ), অনুমথি (অনুমতি), অস্থ্র (অস্ত্র), আকাশাম (আকাশ), অহিংসাম (অহিংসা), অনুভভা (অনুভব),আচচারিয়া (আচার্য), আশির্ভাদা (আশির্বাদ), আভরণা (আবরণ), আরাম্ভা (আরম্ভ), আরোগ্যা (আরোগ্য), ইচা (ইচ্ছা), ইধায়াম (হৃদয়), উচিথা (উচিত), উধায়ম (উদয়), উপকারানা (উপকরণ), উপকারাম (উপকার), উপাইয়া (উপায়), উপধ্রাবা (উপদ্রপ), উভামানা (উপমান), উভামাই (উদাহরণ), উষণা (উষ্ণ), আক্কিইয়া (ঐক্য), কাংকানা (কাকন), কাথিনা (কঠিন), কাথাই (কথ্য), গন্ধর্ভ (গন্ধর্ব), কাপালা (কপাল), কাম্বালা (কম্বল/কার্পেট), কর্ণা (কর্ন), গর্ভা (গর্ভ), গর্জানা (গর্জন), করুনা, করুমা (কর্ম), কালাসা (কলস/পট), কাভি (কবি), কাভাচা (কবচ), গাওরাভা (গৌরব), খালাংগা (কলংক), কান্নি (কন্যা/অবিবাহিত), কষ্টম (কঠিন), কারানা (কারণ), কালা (কাল/সময়), গানা (গান), কিরাণা (কিরণ), গিরি, গোহাই (গুহা), ঘুণাম (গুনাহ), কুলা (কুল/বংশ), কেস (চুল), কনা (কোণ), গোথুমা (গম), চাক্রা (চাকা), সকথি (শক্তি), সাকালা (সকল), সাহাজা (সহজ), সাহিথা (সহিত), সাংকাটা (সংকট), সাথথিয়া (সত্য), সাদাম (শতক), সথ্রু (শত্রু), সধা (সতত), চাথুরা (চতুর্থ), সান্ধি (সন্ধি), সনেধহা (সন্দেহ), সাপথা (সাত), সাবথা (শব্দ), সাবি (সমিতি), সামাথুভাম (সমতা), চান্দ্রা (চাঁদ), সনেথাশ (সন্তুষ্ট), সামারপান (সমর্পণ), সামাধি (সমাধি), সামুগা (সামাজিক), সানমানা (দান), সানাই (শান), চাথুরিয়া (চতুর), সানথি (শান্তি), সালাই (সড়ক), সিকারা (শিখর), সিসু (শিশু), স্নেহিথা (স্নেহ), চিন্না (চিহ্ন), সুগান্থা (সুগন্ধ), সুদ্ধা (শুদ্ধ), সুন্ধারা (সুন্দর), স্বাবায়ম্বরা (স্বয়ম্বরা), সুরাংগা (সুড়ঙ্গ), সিবাই (সেবা), স্বপ্না (স্বপ্ন), দাহানাম (দহন), দাথথু (দত্তক), ধামপাতি (দম্পতি), ধারানী (ধরণী), ধারিশানা (দর্শন), অর্থ, অন্ন, নিবাস, আনন্দ, শ্রদ্ধাঞ্জলী, অঞ্জলী, ভবন, লক্ষ্য, মোড়, শংকর, নাথ, কানন, কলিংগ, প্যান্ডেল, মহাভারত, অভিরুচি, রামায়ন, বাল্মিকী, দেবী, নীলগগন ইত্যাদি শব্দগুলোর উৎস সংস্কৃত – যা তামিল ভাষায় ঠাঁই নিয়েছে এবং যেগুলোর সাথে বাংলার বহুলাংশে মিল আছে। দিশাই, দ্রাভা, ধিরাভিয়া ইত্যাদি এরকম বহু শব্দ আছে যেগুলোর সাথে বাংলা শব্দের রয়েছে মিল। আমি অবাকই হয়েছি, ভালোও লেগেছে।
তামিলদের আতিথেয়তা সম্পর্কে বলার জন্য আমি একজন আগরতলার বাঙালী মো. জমিরকে (চেন্নাইতে চাকরি করেন) জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, অনেকেই তামিলদের কনজারভেটিভ বলে থাকেন, কিন্তু তামিলরা বলেন, “নো উই আর নট কনজারভেটিভ বাট কনস্ট্রাকটিভ” সবখানে, সবসময়। কানাডাতে শিখদের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম মাইগ্রেন্ট জনগোষ্ঠী হলো তামিল। নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফ্রান্স সুইডেনেও তামিলরা অবস্থান করছে সদর্পে। আফ্রিকান ইন্ডিয়ানদের মধ্যে এবং সিংগাপুরের ইন্ডিয়ানদের মধ্যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হলো তামিল।
ভারতের প্রদেশগুলোর মধ্যে একমাত্র তামিলনাড়ুতেই কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা ধর্মীয় বর্ণবাদ নেই, এটার জন্য বহু তামিলিয়ানকে আমি গর্ব করতে দেখেছি। যদিও ভারতের যেকোনো প্রদেশের চেয়ে তামিলনাড়ুতে মন্দিরের সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতে তামিলদের নামের মধ্যে এমন কোনো অংশ দেখা যায় না, যার দ্বারা বর্ণকে চিহ্নিত করা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কারো নাম দ্বারা তার বর্ণ পরিচয় জানা যাবে না।
এটা তামিলদের এক বিশেষ গুণ যে, বহু দলিত উত্তর ভারত থেকে এসে তামিলনাড়ুতে বসবাস করছে, যাদের বর্ণ পরিচয়ের কারণে কখনোই লাঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হতে হয়নি। এটা তামিলদের সম্মানকে আরেকটু বাড়িয়ে দেয়।
শিক্ষিত, মার্জিত, পরিশ্রমি আর পরিমিতব্যয়ী তামিলদের সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু আমি জানার চেষ্টা করছিলাম। বহুজনকে আমি এই অভিযোগ করতে দেখেছি যে, তামিলরা স্বার্থপর, এমন কোনো কাজ তামিলরা করবে না, যেখানে তাদের ন্যূনতম স্বার্থ নেই, তা সে যত ভালো আর মহৎ কাজই হোক। তামিলরা কর্নাটকীদের প্রতি বিদ্বেষী, হিন্দির প্রতি হেট্রেড তাদের জন্মগত। এটাও শুনেছি যে, তামিলরা মূলত কর্নাটকীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তাদের রাজনীতিবিদদের দেখানো ভুল পথ ধরে।
কাভেরী নদীর পানি নিয়ে কর্নাটক আর তামিলনাড়ুর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। আর প্রতারক রাজনীতিবিদরা চেন্নাই তথা তামিলনাড়ুর পানি সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে কাভেরী নদীকে কেন্দ্র করে কর্নাটকীদের দায়ী করে, বিদ্বেষ পোষণ করতে জনগণকে প্ররোচিত করে। অন্যদিকে কর্নাটকী রাজনীতিবিদরা তাদের জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষিত তামিলদের বিরুদ্ধে তাদের পাকা ধানে মই দেওয়ার অভিযোগ করে থাকে। কারণ ব্যাঙ্গালুরুর চাকরিতে ৩০ শতাংশ জায়গা করে নিয়েছে তামিলরা– যা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতারই স্বীকৃতি।

আমার দেখা অভিজ্ঞতা হলো তামিল অটোওয়ালা সবচেয়ে সুযোগ সন্ধানী, এটা তামিলরাও স্বীকার করে থাকে। অটোওয়ালারা মিটারে যেতে চায় না, গেলেও মিটার টেম্পারিং করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা বা বহুপথ অকারণে ঘুরিয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়া তাদের মজ্জাগত, আর যদি বুঝে যাত্রী তামিল নন, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে পথে ঘাটে ড্রাইভার আর যাত্রীর মধ্যে কোনো ক্যাচালে কোনো তামিলিয়ান যাত্রীর পক্ষে ন্যায্য কথাও বলবেনা – এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশীরা চেন্নাইতে আসলে এটি বিশেষভাবে মাথায় রাখলে ঠকতে হবে না। যেখানে সেখানে দাড়িয়ে প্রস্রাব করা তাদের মজ্জাগত, সেই দৃশ্য চরম অসহ্য ও কদাকার, ন্যূনতম বিবেচনা এক্ষেত্রে তাদের নেই। একটি লেখা পড়লাম যেখানে তামিলদের সমালোচনা করতে গিয়ে লেখক বলছেন- ‘Most of them (Tamilian) except very few, develop a bad ego ridden attitude. Most of the Tamilian guys treat girls like objects and most of the Tamilian girls treat guys as if they are rapists and thieves. Tamilian guys and girls can never see each other as true friends. Mostly even the best of friends have crush on each other. We Tamilian take pride in our language, but now it has turned into an aggression towards others.’
এসব বাদে তামিলদের রয়েছে এমন কিছু সম্পদ যার জন্য তারা সব সময় নিজেদের সুপিরিয়র ভাবতে পছন্দ করে। জাতীয় ব্যক্তিত্ব আর জাতীয় সম্পদকে তামিলরা বাংলাদেশের মতো দলীয় বিবেচনায় মূল্যায়ন করে না। তামিলরা নিজেদের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং তাদের জন্য গর্ববোধ করে থাকে। যেমন:
১. বিশ্বনাথ আনন্দ (৫ বার বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন)
২. ড. এপিজে আবদুল কালাম (সাবেক রাষ্ট্রপতি, ভারতের মিসাইল ম্যান, ভারতরত্ন)
৩. এআর রহমান (দুইবার অস্কার বিজয়ী)
৪. বোধি ধর্মন (জেন বুদ্ধইজম ও কুং ফু জনক)
৫. সিভি রমন (নোবেল বিজয়ী)
৬. এস চন্দ্রশেখর (নোবেল বিজয়ী)
৭. ভি রামাকৃষ্ণণ (নোবেল বিজয়ী)
৮. শিবধনু পিল্লাই (বিজ্ঞানী)
৯. সুন্দর পিচাই (অ্যাড্রয়েডের ম্যানেজার)
১০. রাজা রাজা চোলা ও রাজেন্দ্র চোলা
১১. সীতরাম নারায়ন (ফটোশপের বিশেষ অবদানকারী)
১২. শিব আয়াদুরাই (ইমেইলের আবিষ্কারক)
১৩. শ্রীনিবাস রামানুজান (গণিতেঅবদানকারী)
১৪. মুত্তিয়া মুরলিধরন (ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী)
১৫. ইলায়ারাজা (পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ)
১৬. বিজয়ান্তিমালা বালি
১৭. হেমা মালিনী (অভিনেত্রী)
১৮. শ্রী দেবী (অভিনেত্রী)
১৯. রেখা (অভিনেত্রী, অর্ধেক তামিল, বেড়ে উঠেছেন চেন্নাইয়ে)
-স্যালুট এই ব্যক্তিত্বদেরকে।
এখানে একাধিক ভাষা জানাটা বাড়তি যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। দুজন ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন মাতৃভাষা আর তৃতীয় কমন ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে অতি শুদ্ধ আর বেশি বুঝানোর চেষ্টা কতটা বিব্রত করে তা আমরা উদাহরণসহ দেখেছি চেন্নাইতে আমাদের দুজন কলিগের চুল কাটার অভিজ্ঞতায়। চেন্নাইতে দুই মাস থাকার দরুন অনেক কলিগের মাথায় চুলের বাহার দেখা যাচ্ছিল, আবার কারো কারো প্রতিমাসে চুলকাটার বাতিক ছিলই হয়তো।
আর সেরকম তাড়নায় ধরা যাক আমাদের কলিগদের মধ্যে ‘এ’ নামের একজন, তিনি খুবই ভালো ইংরেজি বলতে পারেন; তার উচ্চারণ, উপস্থাপনা ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই পছন্দ। উনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র এবং এখন সরকারি কলেজে ইংরেজি পড়ান। তার ইংরেজিতে কথা বলতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিনি সেলুনে গিয়ে এমন সুন্দরভাবে ইংরেজি বলার কারণে কাজ চালানো ইংরেজিধারী নরসুন্দর তার মাথার চুলের যে উদ্ভট ও হাস্যকর দৃশ্যায়ন করেছিলেন – তাতে আমার মনে হয়েছে, তার গলায় ক্ষুর ধরে জোরজবরদস্তি করে এভাবে বেখাপ্পা করে চুল কাটা হয়েছে। বেচারি দিন কয়েক চরম অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন।
আমরা সহকর্মী, আমাদের কাছে বিষয়টা অতি সাধারণ যেহেতু এটি দেশের বাইরে ঘটেছে। কিন্তু যদি ব্যাপারটা ‘এ’র নিজ কর্মস্থলে ঘটতো তাহলে এ দৃশ্য দেখে শিক্ষার্থীরা ‘এ’ স্যারকে যে বিভিন্ন খেতাব উপহার দিতেন এটা অবশ্যম্ভাবী।
আরেক সহকর্মী, পলিটেকনিকের শিক্ষক, বেশ অভিজ্ঞ এবং অত্যন্ত মার্জিত স্বভাবের মানুষ। তিনিও গিয়েছিলেন চুল কাটাতে এবং সেখানে ইংরেজিতে ওই সেলুনম্যানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, চুলকাটার মেশিন আছে কিনা এবং চুল মেশিনের সাহায্যে একটু স্মল করে কাটাতে পারবে কিনা। ‘মেশিন’ আর ‘স্মল’ শব্দ দুটিকে চিনতে পেরে অত্যন্ত খুশি হয়ে পরিশ্রম করে সানন্দে চুল কেটেছিলেন নরসুন্দর। ঐ মাথা নিয়ে হোস্টেলে ফিরতে আমাদের সহকর্মীর মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ঐ ‘বি’ নামের সহকর্মী কার্যত সপ্তাহখানেক শরমে আমাদের ধারে কাছে তেমন আসতেন না এবং স্থায়ীভাবে গোলটুপির নীচে মস্তক নোয়াতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এটা নিয়ে আমাদের হোস্টেলে এবং বাইরে সবখানেই ব্যাপক হাসাহাসি হয়েছে। কেউ কেউ দুষ্টুমী করে ভিন্ন ইঙ্গিত করেছেন, যেন তিনি কোথাও গিয়ে ধরা পড়েছিলেন, তাই তার মাথার এই অবস্থা। অত্যন্ত সন্মানী মানুষটির এই দুর্গতির জন্য দায়ী কে? ভাষা, কেবল ভাষা। কলিগ ‘এ’ এর মাথা নষ্ট হয়েছিল সুন্দর করে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের কারণে– যা ঐ সেলুনম্যান তার মুর্খতার কারণে বুঝতেই পারেননি।
আর কলিগ ‘বি’-এর মাথা বেহাল হয়েছিল ইংরেজিতে ‘মেশিন’ আর ‘স্মল’ শব্দ দুটি সেলুনম্যান এর কাছে অতি পরিচিতির কারণে। আমার দৃষ্টিতে একটা হলো বেশি বুঝানোর ফল, আরেকটি হলো স্বল্প বুঝানোর বিফল। এখনও সেই মাথা দুটোর দৃশ্য চোখে ভাসে, ভাসে গোল টুপির ভদ্রলোককে। দিনের বেলায় মাথায় টুপি পড়াটা অধিক রোদের কারণ হিসাবে চালানো যায়, কিন্তু রাতে কিংবা এসি বাসের ভিতরে মাথায় গোলটুপিতে আমাদের চোখ গোল হয়ে যেত, হাসাহাসি করতাম কিন্তু বুঝতে দিতাম না। তাদের নামের সাথে ‘মেশিন অমুক’, ‘স্মল তমুক’ যোগ হয়ে যায়।
‘‘முஹம்மத் ஷஹ்ஜஹான்’’- তামিল ভাষায় এটি লেখকের নাম।
বি.দ্র.: আগামী পর্বে থাকবে চেন্নাই হতে কইমবাটোর ভ্রমণ ও সেখানকার অভিজ্ঞতা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফই








