দেশের ফুটবলে পরিবর্তনের হাওয়া
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় দুই দশক ঝিমিয়ে থাকা বাংলাদেশের ফুটবল জেগে উঠতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিতে জাতীয় দল নিয়ে বেড়েছে সমর্থকদের আগ্রহ।
২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে হামজা চৌধুরীর। হামজা বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। ইংল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব লিচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
২০১৩ সালে লাল সবুজের জার্সিতে প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে খেলার ইতিহাস গড়েন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক জামাল ভুঁইয়া। ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজী দেশের ঘরোয়া ফুটবল এবং জাতীয় দলে নিয়মিত মুখ। বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় রয়েছেন ক্যানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানে।
সাম্প্রতিক সময় বিশ্বের বিভিন্ন লিগে আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কুইন সুলিভান আর কাভান সুলিভান খেলছেন মেজর লিগ সকারে। তারা স্বপ্ন দেখছেন মার্কিন জাতীয় দলে খেলার। তাই আপাতত তাদের বাংলাদেশ দলে খেলার সম্ভাবনা নেই।
সুলিভানদের আরও দুই ভাই রোনান আর ডেকলানও ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠছেন। ফিলাডেলফিয়া একাডেমি দলে খেলা রোনান আর ডেকলানের সাথে যোগাযোগের সংবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি ফাহাদ করিম। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ১৩টি দেশে বসবাস করা ৩২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চলতি বছরের জুনে প্রবাসী ফুটবলারদের জন্য আয়োজন করা হতে পারে উন্মুক্ত ট্রায়াল। মুলত বয়সভিত্তিক আর জাতীয় দলের খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্যই অনুষ্ঠিত হবে প্রবাসীদের ট্রায়াল। আগামী ৯-১৮ মে ভারতের অরুণাচলে অনুষ্ঠিত হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। আসন্ন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে ইংল্যান্ড প্রবাসী এলমান মতিন এবং ইতালি প্রবাসী আব্দুল কাদেরকে।
প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে কিছুটা ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। মার্চে ইতালির চতুর্থ টায়ারের ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলাম ছিলেন সৌদি আরবে আয়োজিত বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে। কিন্তু তাকে চূড়ান্ত দলে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯ বছরের ফাহমিদুলকে বাদ দেয়া হয়েছে বয়স বিবেচনায়। কেউ কেউ বলছেন, শৃঙ্খলাজনিত কারণে বাদ পড়েছেন ফাহমিদুল!
ফাহমিদুল ইস্যুতে সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা। ফাহমিদুলের চেয়ে কম বয়সে বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মোঃ মোরসালিনের। উইঙ্গার হলেও স্ট্রাইকার পজিশনে খেলায় পারঙ্গম ফাহমিদুল সৌদি আরবে প্রস্তুতি ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছিলেন। সমর্থকরা মনে করছেন, ফাহমিদুল স্কোয়াডে থাকলে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ত। অন্তত মেহেদি হাসান জনি আর চন্দন রায়দের মতো অবারিত গোলের সুযোগ নষ্ট করতেন না ফাহমিদুল!
থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানে হারিয়ে রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের মেয়েরা
ইতোমধ্যে তরুণ ফুটবল সমর্থকরা একাট্টা হয়েছেন বাংলাদেশ দলে প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াবার দাবিতে। আবার সাবেক ফুটবলারদের অনেকেই প্রবাসী ফুটবলারদের অবাধ আমদানির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রখ্যাত ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু জানিয়েছেন,’প্রবাসী ফুটবলারদের উপর নির্ভরতা হচ্ছে সাফল্যের শর্টকাট পথ। হামজা চৌধুরীর বিষয়টা আলাদা। তিনি অনেক উঁচুমাপের ফুটবলার। হামজা মানের ফুটবলার সব সময় পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের উচিৎ ঘরোয়া আর জেলা লিগ সচল করা। তাতে দেশেই প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে আসবে।’
টিপু চীনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘সাফল্যের নেশায় চীন বিদেশি ফুটবলারদের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। ব্রাজিলের সার্জিনহো এবং ইংল্যান্ড যুব দলে খেলা টাইয়াস ব্রাউনিং ও নিকো ইয়েনারিস চীনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাতেও চীনের ফিফা বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না।’
বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেয়া চীনা ফুটবল দল সাফল্য পায়নি। কিন্তু একই পথে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড রয়েছে ফ্রান্স আর জার্মানির মতো দলের। তাই বাফুফে’র সামনে চ্যালেঞ্জটা কঠিন। শুধুমাত্র দেশীয়দের নিয়ে বাংলাদেশ খাবি খাচ্ছে ব্যর্থতার আবর্তে। তাই প্রবাসীদের উপর নির্ভর করতেই হচ্ছে। সেই সাথে সারা দেশের জেলা পর্যায়ে ঘরোয়া ফুটবলের নিয়মিত আয়োজনের চ্যালেঞ্জটাও বাফুফে’কে নিতে হবে। অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নিজেদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে বাফুফে’র কার্যকরী ভূমিকা দেখতে মুখিয়ে আছে সবাই।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি








