নিজেও গুম হতে পারেন, আশঙ্কা খালেদার
ঢাকা: নিজে গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরাও জানি না কতোদিন এভাবে বেঁচে থাকতে পারবো। আমাদেরও যে মেরে ফেলা হবে না, তা আমরা বলতে পারি না।
তিনি বলেন, “আজকে এই সরকারের কাছে গুমের শিকার পরিবারের স্বজনরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু আমি জানি এই অবৈধ সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করবে না। সেজন্য আমরা জাতিসংঘের অধীনে সকল গুম খুনের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি।”
রোববার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিশ্ব গুম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে গুমের শিকার পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস পালন হয়। কিন্তু আমি জানতে চাই, কেনো এই অবৈধ সরকার আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালন করলো না? কারণ তারা এসব গুমের সঙ্গে জড়িত। সরকারে আদেশ নির্দেশ ছাড়া কেউ এটা করতে পারে না। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, কারো কোনো মৌলিক অধিকার নেই। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার নেই। শুধুমাত্র যারা ক্ষমতায় আছে অধিকার তাদের রয়েছে। তারা বড় গলায় মিথ্যা কথা বলতে পারে। এই অবৈধ সরকারকেও আমরা সজাগ করতে চাই। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি চাই। বাংলাদেশে আগে কখনও গুমের ঘটনা ঘটেনি। এটা আওয়ামী লীগের সময় শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে মেধাবী ছেলেরা নেতৃত্ব দিতে না পারে এজন্যই তাদেরকে ধরে ধরে গুম করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আজকে খবরের কাগজ খুললেই খুন, গুম ও নারী নির্যাতন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ জড়িত। লীগওয়ালারা এসব কাজে ব্যস্ত। আমরা কোন্ দেশে বাস করছি? বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তারা বলছে, বিএনপির লোকেরা পেট্রোল বোমা মেরেছে, বাসে আগুন দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু এসব করেছে সরকারের লোকেরা। আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা পেট্রোল বোমা মেরেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে, মানুষকে হত্যা করেছে। পুলিশতো নিজেরাই এসব স্বীকার করেছে, বলেছে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, “বাংলাদেশকে আজকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার। তারা দেশের ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছে। জোর করে হলেও এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা সরকারের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই অবৈধ সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করবে না। সে জন্য আমরা জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের সকল গুমের তদন্ত দাবি করছি।”
তিনি স্বজনহারাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজকে আপনাদেরকে শান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। যদি সুযোগ আসে অবশ্যই এর বিচার একদিন না একদিন হবে।”
গুমের শিকার স্বজনদের মধ্যে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদি লুনা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জিডি করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।” সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে স্বামীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা মো. শামসুদ্দিন বলেন, “আমার সামনে থেকে মুন্না ও আরেকটি ছেলে তরিকুল ইসলাম ঝন্টুকে ধরে নিয়ে গেছে। তখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কারা? পুলিশ বলেছিল, আপনার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। ছেলেকে না পেয়ে যখন মামলা করতে গিয়েছিলাম তখন বলা হলো সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।”
তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া যুবদলের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম বলেন, “সুমন ও তার ৬ বন্ধুকে র্যাব মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে আমার ভাইয়ের কোনো খবর পাচ্ছি না। প্রশাসনের প্রতিটি দরজায় গিয়েছি। কিন্তু কেউ বলেনি কোথায় আছে আমার ভাই।”
মাজেদুল ইসলাম রাসেলের বোন লাবনি আক্তার বলেন, “প্রতিদিন ভাবি ভাই ফিরে আসবে এই সংবাদ আসবে। কিন্তু এই সংবাদটা আর আসে না। ছেলে হারানোর বেদনায় বাবা মা বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। পুলিশের কাছে যখন গিয়েছে তখন নির্বাচনের পর খবর দেয়ার আশ্বাস দিলেও নির্বাচন হয়ে গেলে দুই বছর কিন্তু আমরা আমাদের ভাইয়ের কোনো খবর পাইনি।”
সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নি বলেন, “আমার ভাইকে যখন প্রশাসনের লোক নিয়ে যাচ্ছিল তখন বলেছিলাম আমার ভাই রাজনীতি করে, সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তখন বুঝতে পারিনি তখনই ভাইকে আমাদের শেষ দেখা হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের ভাইকে ফেরত চাই।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরআর/এএইচকে/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








