সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ
ফাইল ছবি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সব জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে নতুন ডিসিদের জন্য 'ফিটলিস্ট' তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যোগ্য, দক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন কর্মকর্তাদেরই এবার ডিসি হিসেবে বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবার ডিসি নিয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। অতীতের বিতর্ক এড়াতে কোনো রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে এই পদে না রাখার বিষয়ে সরকার কঠোর। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ যদি কোনো তথ্য গোপন করে বা ছলচাতুরীর মাধ্যমে নিয়োগ পান এবং পরে তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিব। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত সব বিষয়ে এই কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছে।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের মোট ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।
মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। উল্লেখ্য, ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও এখনো তাদের মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।
ইতিমধ্যে গত ১৮ আগস্ট সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। উপসচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নিয়োগকে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে চলমান পরিবর্তনের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এবার সিলেটের ডিসি
২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগের জন্য ১০৮ জন কর্মকর্তার একটি ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের 'বঞ্চিত' দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এমনকি মারামারি ও হাতাহাতির মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে, যা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই সমালোচনার পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসি নিয়োগের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে।
শুধুমাত্র ডিসি নিয়োগই নয়, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিবের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি বড় ভুল হিসেবে দেখছেন অনেকে।
সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার এই পরিস্থিতিকে "অসাধ্য" বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬ বা ২০০১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারগুলোকে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি দ্রুত প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, একটি দক্ষ আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয় এবং এখনো সময় আছে প্রশাসনের হারানো প্রাণ ফিরিয়ে আনার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক জানিয়েছেন, ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে এবং দ্রুতই এই নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে তারা আশা করছেন। সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এমন যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো ধরনের প্রশ্ন না ওঠে।
সব মিলিয়ে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং মাঠ প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে চাইছে। নতুন ডিসিদের নিয়োগ এই লক্ষ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








