News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৪ আগস্ট ২০২৫

জুলাই সনদে আইনি সুরক্ষা, ভোটের আগে সুপারিশ বাস্তবায়ন

জুলাই সনদে আইনি সুরক্ষা, ভোটের আগে সুপারিশ বাস্তবায়ন

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সমন্বিত রূপ ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই খসড়াটি আগামী শুক্রবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতামত নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) চূড়ান্ত করা হতে পারে এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। 

এই সনদের মূল লক্ষ্য হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত সংস্কার প্রস্তাবগুলো যেন পরবর্তী সরকারের সময়েও কার্যকর থাকে, তা নিশ্চিত করা।

কমিশনের পক্ষ থেকে সনদে কিছু যুগান্তকারী আইনি সুরক্ষার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

সমন্বিত খসড়ায় বলা হয়েছে যে, এই সনদ জনগণের সর্বজনীন অভিপ্রায়ের সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসেবে প্রণীত হয়েছে। তাই, এর কোনো বিধান, নীতি বা বাক্য যদি বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তবে সনদই প্রাধান্য পাবে। 

তবে, প্রাথমিক খসড়ায় থাকা দুটি বিতর্কিত বিষয়—সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলার শর্ত এবং অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব—বুধবারের আলোচনার পর বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দায়মুক্তির বিতর্কিত পথে তারা যেতে চান না।

সমন্বিত খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সনদের ব্যাখ্যার এখতিয়ার থাকবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে। অর্থাৎ, কোনো আইনি জটিলতা দেখা দিলে চূড়ান্ত সমাধান দেবে আদালত।

আগের খসড়ায় থাকা অঙ্গীকারনামায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছিল, সংস্কার প্রস্তাবগুলো পরবর্তী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কিছু দলের আপত্তির মুখে এই সময়সীমা বাদ দেওয়া হয়েছে। এই দলগুলো নির্বাচনের আগেই সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিল।

নতুন সমন্বিত খসড়ার অঙ্গীকারনামায় মোট ৯টি দফা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হলো:

  • গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
  • শহীদদের মর্যাদা: গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
  • অবিলম্বে বাস্তবায়ন: সনদের যে সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবে।

আরও পড়ুন: আবারও আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপ করে ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেছে। এর মধ্যে:

প্রথম পর্বের সংলাপে ৬২টি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে।

দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ১১টি বিষয়ে ভিন্নমত ছাড়া ঐকমত্য এবং বাকি ৯টি বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

৯টি বিষয়ে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) দেওয়া দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি এবং বাম দলগুলো রয়েছে। এসব দল আগেই জানিয়ে রেখেছে যে, ক্ষমতায় গেলে তারা এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে না।

সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশন এখনো রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কমিশন সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব করেছিল: অধ্যাদেশ, গণভোট, গণপরিষদ, সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সংসদ।

বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো মনে করে, সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই এমন সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে, কিন্তু সাংবিধানিক পরিবর্তনগুলো পরবর্তী সংসদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এবং গণঅধিকার পরিষদ-এর মতো দলগুলো গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষে। তারা ১৯৭৬-৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পদ্ধতিতে সংবিধান পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে।

এনসিপি গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার চায়।

গত রবিবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক আলোচনায় মতামত দেওয়া হয় যে, বর্তমান সরকার যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত, তাই সংবিধানের বাইরেও সমাধান খোঁজা যেতে পারে। 

তবে, অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন, কারণ এটি সংসদের অনুমোদন না পেলে ৩০ দিনের মধ্যে বাতিল হয়ে যেতে পারে। এই জটিলতা এড়াতেই কমিশন অধ্যাদেশের বিষয়টি বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ আশা করছেন, আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর খসড়াটি চূড়ান্ত হবে এবং শুক্রবার সকালে তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। দলগুলো এরপর তৃতীয় পর্বে এই খসড়া নিয়ে আলোচনা করবে এবং চূড়ান্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান কবে হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। এই সনদের অঙ্গীকারনামায় প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর থাকবে, যা সংস্কারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়