লোকসঙ্গীতের আকাশে নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন ফরিদা পারভীন

ফাইল ছবি
বাংলাদেশের লোকসংগীতের আকাশে নক্ষত্রপতন ঘটেছে। না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন বরেণ্য লোকসঙ্গীত শিল্পী, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল কারও হিসাবে ৭১ বছর, আবার সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৭৩ বছর।
মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর কন্যা জিহান ফারিহা এবং পুত্র ইমাম জাফর নোমানী।
ইমাম জাফর নোমানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মায়ের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে লিখেছেন, আম্মা আজ রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আম্মার সব ভুল-ত্রুটি মার্জনা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হতো।
আরও পড়ুন: লাইফ সাপোর্টে ফরিদা পারভীন
গত ২ সেপ্টেম্বর নিয়মিত ডায়ালাইসিসের জন্য তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডায়ালাইসিসের পর শারীরিক অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হয়। পরবর্তীতে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে। সব চিকিৎসা প্রয়াস ব্যর্থ করে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি পরলোকগমন করেন।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে তাঁর পেশাদার সংগীতজীবনের সূচনা ঘটে। দীর্ঘ ৫৫ বছরের শিল্পীজীবনে তিনি হয়ে ওঠেন লালন গানের প্রধান কণ্ঠস্বর ও বাংলার লোকসঙ্গীতের এক অবিস্মরণীয় নাম।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনের গান হয়ে উঠত আত্মার সঙ্গীত। তাঁর গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে “তোমার বানী আমি শুনিতে চাহি”, “নিন্দা করো মন্দ করো”, “মিলন হবে কতো দিনে”।
তাঁর গানে ছিল মাটির গন্ধ, নদীর সুর, মানুষের প্রাণ। তিনি শুধু গেয়েই যাননি, বরং লোকসংগীতকে করেছিলেন জাগরণ, করেছিলেন আন্দোলন।
এই কিংবদন্তি শিল্পী রেখে গেছেন চার সন্তান—পুত্র ইমাম জাফর নোমানী, কন্যা জিহান ফারিহা এবং আরও দুই সন্তান—অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্ত, এবং বাংলা গানের বিপুল উত্তরাধিকার।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কণ্ঠে যেমন ছিল প্রজ্ঞা, তেমনি ছিল গভীর অনুভব। তিনি ছিলেন কেবল একজন শিল্পী নন, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম, যিনি দেশ-বিদেশে বাংলার লোকসংগীতকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি