গাজায় একদিনে ৪৯ জন নিহত, জাতিসংঘ আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন।
একইসঙ্গে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলভিত্তিক আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলার ফলে ফিলিস্তিনিরা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার কেবল গাজা সিটিতেই নিহতের সংখ্যা ৪৯ জন, তবে গোটা গাজা উপত্যকায় একই দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৬২ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার কারণে গাজা সিটি থেকে অন্তত ৬ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, অবরোধ আর লাগাতার হামলার মধ্যে গাজা সিটির বাসিন্দারা এখন চরম অমানবিক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিকে পুরোপুরি দখলের লক্ষ্য নিয়ে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালাচ্ছে। শহরের বাসিন্দাদের প্রাণ বাঁচাতে উড়োজাহাজ থেকে লিফলেট ফেলে মানুষকে পালানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু হামলার ধরণ ও গতি এমন যে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, প্রতি ১০–১৫ মিনিট অন্তর আবাসিক ভবন এবং জনসেবামূলক স্থাপনায় বোমা ফেলা হচ্ছে, মানুষ নিরাপদে সরে যাওয়ার সময় পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে বিপুল ভোটে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রস্তাব পাস
তিনি আরও বলেন, হামলার ধরন ও গতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ইসরায়েলি সেনারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আশ্রিত বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ জড়ো হয়েছেন।
তবে, অনেকেই গাজা সিটিতে থেকে যাচ্ছেন, বা দক্ষিণের শরণার্থী শিবিরে অমানবিক পরিস্থিতি দেখে ফেরত আসছেন। দক্ষিণে অবস্থিত আল-মাওয়াসি ক্যাম্প ও দেইর আল-বালাহ এলাকা ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত ভিড়ে জর্জরিত এবং বারবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, বাসিন্দারা শহরের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে সরে আসছেন, কিন্তু খুব অল্প সংখ্যকই দক্ষিণে পৌঁছাতে পারছেন। যারা দক্ষিণে যাচ্ছেন, তারা আবার অতিরিক্ত ভিড় ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবের কারণে গাজা সিটিতে ফিরে আসছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এখনও প্রায় ৯ লাখ মানুষ গাজা সিটিতে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেছে যে, গাজা সিটি থেকে আড়াই লাখের বেশি মানুষ পালিয়েছেন।
গাজা সিটিতে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হামলার সময় এক হাজারেরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল, যেখানে বহু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল।
বেঁচে থাকা এক নারী ফিদা জাআনিন বলেন, আমরা জিনিসপত্র বাইরে রেখেই ছিলাম। মিনিটখানেকের মধ্যে স্কুলে বোমা পড়লো। এখন আমরা খালি হাতে তাঁবুতে বসে আছি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিজনিত কারণে আরও সাতজন মারা গেছেন, যার মধ্যে শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২০, যার মধ্যে ১৪৫ শিশু।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি