News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ধুঁকতে থাকা ৫ ব্যাংক একীভূত হয়ে যে নাম হতে যাচ্ছে

ধুঁকতে থাকা ৫ ব্যাংক একীভূত হয়ে যে নাম হতে যাচ্ছে

ফাইল ছবি

সমস্যার মধ্যে থাকা পাঁচটি শরীয়াহভিত্তিক বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক চূড়ান্তভাবে একীভূত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ বোর্ড সভার মাধ্যমে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আলোকে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রশাসকের সহযোগিতার জন্য প্রতিটি ব্যাংকে চারজন করে কর্মকর্তা থাকা যাবে। 

একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য—অমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে ফেরত দেওয়া এবং ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা পুনঃস্থাপন করা।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই বিশেষ বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য বোর্ড সদস্যরা।

শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত পাঁচটি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক—একীভূতের আওতায় আসছে। এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। নতুন একীভূত ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন ব্যাংকের জন্য শিগগিরই লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রশাসক নিয়োগের পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারও শূন্য ঘোষণা করা হবে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একীভূত ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায়ভার নতুন গঠিত ব্যাংকের অধীনে স্থানান্তরিত হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করার পর একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নতুন ব্যাংকের শেয়ার বেসরকারি খাতে বিক্রি করে সরকারের বিনিয়োগ ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের আমানতকারীদের শেয়ার নেয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হবে। ছোট আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা তুলে নিতে পারবেন—এতে কোনো বাধা থাকবে না।

আরও পড়ুন: ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের ভাবনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রয়োজনীয় মোট অর্থ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সরকারের সময় এই ব্যাংকগুলোর ঋণের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ জালিয়াতির কারণে খেলাপি হয়ে গেছে।

চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। তখন শেষবারের মতো তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—কেন তাদের একীভূতকরণের আওতায় আনা উচিত হবে না। ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সরাসরি একীভূত হতে রাজি হয়। এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সময় চাইলেও তা দেওয়া হয়নি।

অতীতের আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতায় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই ব্যাংকগুলো চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় অংশ খেলাপি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরত নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান ঘটবে এবং পুনর্গঠন কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা পুনঃস্থাপন সম্ভব হবে। 

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সভায় জানান, আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য ব্যাংকগুলো একীভূত হবে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সরকার আমানতকারীদের দায়িত্ব নেবে।

এর আগে এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি (ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে পরিচালিত হতো।

উল্লেখ্য, একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে এবং সময়মতো এটি বেসরকারি খাতে শেয়ার বিক্রি করে সরকারের বিনিয়োগ ফেরত নেওয়া হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়