‘নীতিমালার নামে ব্যাটারিচালিত রিকশাব্যবসায়ীদের সুবিধা নয়’

ছবি: সংগৃহীত
আগামীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য করা নীতিমালার নামে ব্যাটারিচালিত/ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদন, বিপননে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জালাল আহমেদ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “আগামীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য প্রণীত নীতিমালায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমানে চলমান ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক মোডিফাই (পরিবর্তন) বা Replacement করার জন্য অন্তত ২ বছর সময় দিতে হবে। নীতিমালার নামে ব্যাটারিচালিত/ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদন, বিপননে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া যাবে না। স্থানীয় উৎপাদকদের বিআরটিএ বা সরকার অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত যানবাহন উৎপাদন ও বিপননের অনুমতি প্রদান করতে হবে। স্থানীয় মেকানিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নীতিমালায় এ বিষয়গুলো যুক্ত করা না হলে দেশের ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালকসহ সংশ্লিষ্টরা কোনো নীতিমালা গ্রহণ করবে না।”
সমাবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়, গণবিরোধী স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন আইন) ৪৫ নং অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বক্তারা বলেন, “দেশের প্রায় ২.৫ থেকে ৩ কোটি মানুষ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও প্রায় ৫০ লাখ চালক এই ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গত ১২ বছর ধরে সংগ্রাম পরিষদ একটি নীতিমালা তৈরি করে সারাদেশের ব্যাটারিচালিত/ইলেকট্রিক যানবাহনকে নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স, রুট পারমিট প্রদান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য পৃথক লেন/সার্ভিস রোড নির্মাণ, চালকসহ সংশ্লিষ্টদের ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।”
তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে ভুয়া জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের নাম
সমাবেশে জানানো হয়, গত ৫/৭ বছরে ব্যাটারিচালিত/ইলেকট্রিক যানবাহনের জন্য চারটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি ইলেকট্রিক মোটরযান ও রেজিস্ট্রেশন চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কার্যকর হয়েছে। বাকি ৩টির মধ্যে ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২৪’, ২০১৮ সাল থেকে নানা পর্যায় পেরিয়ে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সব পক্ষের মতামত নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত আকারে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এখন এটি জমা আছে। নতুন করে গত জুন মাসে বিআরটিএ ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’ নামে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তাব করেছে এবং মতামত চেয়েছে।
তারা বলেন, “২৮ আগস্ট কোনো অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) অধ্যাদেশ নং ৪৫, ২০২৫ সংশোধন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের অধীন সিটি করপোরেশগুলো ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে স্বল্পগতি যানবাহন আখ্যা দিয়ে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে। এই নীতিমালা ব্যাটারিচালিত যানবাহন বান্ধব নয়। এটি পুরোটাই আমলা নির্ভর, কতিপয় ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠী স্বার্থে এটি করা হয়েছে। যে কারণেই তড়িঘড়ি বা গোপনীয়তা বা গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।”
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন, দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ জনবল ছাড়াই এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সিটি করপোরেশনকে বিআরটিএ কাজে লিপ্ত করার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত, স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) সংশোধন বাতিল করতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় সব ওয়ার্ডে তথাকথিত রিকশা চালক মালিকের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। সব নীতিমালা পর্যালোচনা করে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালার আলোকে এবং সংগ্রাম পরিষদের সংশোধন-সংযোজনী প্রস্তাবনা গ্রহণ করে ও সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে বিআরটিএর অধীনে ঢাকাসহ সারাদেশে একটি অভিন্ন ও সমন্বিত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি