“জাতীয় স্বার্থবিরোধী পিআর পদ্ধতি দেশের জন্য ভয়ঙ্কর”

ছবি: সংগৃহীত
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এই দেশে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, কিছু আসন বেশি পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে পিআর পদ্ধতি চাওয়া দেশের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। উচ্চ বা নিম্ন কোনো কক্ষেই বিএনপি পিআর পদ্ধতি চায় না।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সূচিতে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব কখনোই ছিল না। তবে কেউ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আন্দোলনে নামলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে দলীয় স্বার্থের চিন্তা করলে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে, আর পতিত স্বৈরাচার সুযোগ নেবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।
তিনি নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন। বিএনপি এমন চর্চা সমর্থন করে না এবং মনে করে এ বিষয়ে বিচার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা উচিত।
সালাহউদ্দিন উল্লেখ করেন, শুধু প্রশাসনিক আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধ করা গ্রহণযোগ্য হবে না; জনগণ এর পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিবেচনা করবে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গে নির্বাচন প্রসঙ্গেও তিনি সতর্ক করেন, সঠিক সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার গঠন না পারলে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তবে সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বৈধ প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন জানাবে, কিন্তু এমন কোনো প্রক্রিয়া উৎসাহিত করবে না যা ভবিষ্যতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন জটিল পর্যায়ে যাচ্ছে: সালাহউদ্দিন
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার সকলের আছে। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের জানিয়েছেন, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল, এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার যদি পিআর পদ্ধতি মানে না, তবে আন্দোলন চলবে, এবং ২৫টি রাজনৈতিক দল পিআরের পক্ষে যারা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে জামায়াত।
সালাহউদ্দিন বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে তা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটি কি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল?
তিনি যুক্তি দেন যে, যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের অধিকার আছে। তবে রাজনৈতিক কৌশলের জবাব বিএনপি নিজস্ব মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমে দেবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা এখনও অব্যাহত আছে। সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ অন্যান্য দাবিতে রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধী। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় দলের কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, বিএনপি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি, নির্বাহী আদেশে দল নিষিদ্ধ করা, এবং জাতীয় স্বার্থের বাইরে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সব চেষ্টা বিপজ্জনক মনে করে এবং তা প্রতিহত করতে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি