ভাঙ্গার দুই ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসনে ফেরাতে হাইকোর্টের রুল

ফাইল ছবি
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আওতাধীন আলগি ও হামিরদি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ইসিসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসির প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটকারীরা হলেন ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমান দুলালসহ আরও তিনজন। তাঁদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
রিট দায়েরের আগে ইসিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে কোনো সাড়া না পাওয়ায় পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিট করা হয় বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী।
অন্যদিকে, ভাঙ্গা উপজেলার আলগি ও হামিরদি ইউনিয়নকে অন্য আসনে স্থানান্তরের প্রতিবাদে এলাকায় কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
আরও পড়ুন: সেই মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম ২ দিনের রিমান্ডে
একই দিনে শুনানি হওয়া আরেকটি রিটে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন (চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা) এবং ফরিদপুর-৫ সংসদীয় আসন (ভাঙ্গা উপজেলা) পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। এ রিটটি দায়ের করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহ আলম রেজা, আইনজীবী এম ফাহাদ খান, ব্যবসায়ী এম এম শহিদুল ইসলাম শাহীন, চরভদ্রাসন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাজাহান শিকদারসহ সদরপুর ও চরভদ্রাসনের ১৬ জন ভোটার।
তাদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।
তিনি জানান, ইসি সম্প্রতি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা মিলিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগি ও হামিরদি ইউনিয়ন দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়, ২০০৮ সালে ইসি আইন ভঙ্গ করে ফরিদপুর-৪ ও ফরিদপুর-৫ আসনকে একত্রিত করে তিনটি উপজেলার সমন্বয়ে একটি আসনে (ফরিদপুর-৪) রূপান্তরিত করে। পরে আবেদনকারীরা পূর্বের মতো ফরিদপুর-৪ ও ফরিদপুর-৫ দুটি স্বতন্ত্র আসন পুনর্বহালের দাবি জানালে ইসি তা নামঞ্জুর করে। এর পাশাপাশি অবৈধভাবে ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা ২০২১ সালের সীমানা নির্ধারণী আইনের ৬ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া, রিটে জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণী আইন ২০২১-এর ৭ ধারা এবং সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আইনজীবী ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, নির্বাচনি আইনে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকারের ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে। কিন্তু কোনো নাগরিককে আইনি প্রতিকার ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
সর্বশেষ হাইকোর্ট দুটি রিটের শুনানি শেষে রুল জারি করেছে। একদিকে আলগি ও হামিরদি ইউনিয়ন স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে; অন্যদিকে ফরিদপুর-৪ ও ফরিদপুর-৫ আসন পুনর্বহালের দাবিও আদালতে উত্থাপিত হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি