News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাদা পাথর লুট: সিলেটের বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন গ্রেফতার

সাদা পাথর লুট: সিলেটের বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন গ্রেফতার

ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকার সাদা পাথর লুট কাণ্ডের মূলহোতা ও পদ স্থগিত করা বিএনপি নেতা হাজি সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯। 

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে.এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ। 

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, সাহাব উদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি। তিনি ভোলাগঞ্জ এলাকার মৃত আব্দুল বারির ছেলে এবং একজন পরিচিত পাথর ব্যবসায়ী। এছাড়াও তিনি ভোলাগঞ্জ পাথর আমদানিকারক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন।

র‌্যাবের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালী ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় মোট ৭টি মামলা রয়েছে। বিশেষত সাদা পাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ১,৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এই ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে সাদা পাথর লুটের ঘটনার দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-৯ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। গ্রেফতারের পর রাতেই তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন: ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুট, ৫ জন আটক

এর আগে, গত ১১ আগস্ট, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাহাব উদ্দিনের সব দলীয় পদ স্থগিত করেন। একই সময়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজী আবদুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তদন্তে আরও জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগে জেলা বিএনপি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। অভিযোগ তদন্তে সহ-সভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সাহাব উদ্দিন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখায় শেষ পর্যন্ত দলীয় পদ হারান।

সাদা পাথর লুটের ঘটনাটি ভোলাগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্র ও রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় ঘটে। ৫ আগস্টের পর সাহাব উদ্দিনের লোকজন তার নামে দখলযজ্ঞ চালিয়ে পাথর লুটপাট শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভোলাগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি জমি দখল, পাথর মহলের জমি ভাড়া দেওয়া এবং রিসোর্ট-রোপওয়ে বাঙ্কারে হামলার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১২ অক্টোবর ও ২০ অক্টোবর সংবাদপত্রে ‘সাদা পাথরে লুটের আঁচড়’ এবং ‘ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কারের পাথর সাবাড়’ শিরোনামে সরজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

সর্বশেষ, ৯ আগস্ট সংবাদপত্রের প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে ‘মব মচ্ছবে সাদা পাথরের সর্বনাশ’ শিরোনামে সরেজমিন প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাদা পাথর ইস্যুতে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু হয়।

র‌্যাব-৯ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ১৫ মিনিটে সাহাব উদ্দিনকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনি ও খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে সাদা পাথর লুট, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। গ্রেফতারের পর র‌্যাব-৯ রাত ২টা ২৯ মিনিটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিস্তারিত জানায়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়