টাকার বিনিময়ে নাগরিকদের গোপন তথ্য মিলছে ‘সব এখানে’

ফাইল ছবি
ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যম, নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করলে যেকোনো ব্যক্তির গোপন তথ্য সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত মোবাইল নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বরই যথেষ্ট।
একটি অ্যাপসের নাম ‘সব এখানে’—যার একই নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু আছে—এই ধরনের চক্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক ব্যালেন্সসহ মোট ২৫ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যাংক ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন।
‘সব এখানে’ অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুললেই কাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করতে হয়। তথ্যের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা চার্জ নির্ধারণ করা থাকে।
চক্রটি তাদের কার্যক্রমের প্রচারের জন্য ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, অ্যাপসটির মাধ্যমে মোবাইল নম্বর বা এনআইডি দিয়ে যে কারো সব ধরনের তথ্য, কল-ডিটেইল, লোকেশন, আইএমইআই নম্বরসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া হারানো এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন, টিআইএন, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নথি তৈরি বা পুনরুদ্ধারের সেবার কথাও বলা হয়।
ভিডিওতে ফ্রি সার্ভিসে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের নামে খোলা বা লেনদেনের নকল স্ক্রিনশট তৈরির সুবিধার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
‘সব এখানে’ অ্যাপে চারটি ধরনের সার্ভিস চালু আছে: অটোমেটিক, ম্যানুয়াল, ফ্রি এবং অন্যান্য সার্ভিস।
আরও পড়ুন: ব্লাড প্রেশারের অ্যালার্ট পাঠাবে অ্যাপল ওয়াচ
অটোমেটিক সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত এনআইডির সার্ভার কপি, ওয়েব হ্যাকিং, সাইন টু এনআইডি, টিন সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন তৈরি, কাস্টম এসএমএস তৈরি। চক্রটি এ জন্য ১০–২০ টাকা চার্জ করে।
ম্যানুয়াল সার্ভিসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ৯৫–১৫০ টাকায় ফোন নম্বর দিয়ে এনআইডি কার্ড, ১১০ টাকায় এনআইডি কার্ড পিডিএফ কপি, ১,০০০ টাকায় তিন মাসের কললিস্টের সঙ্গে লোকেশন, ৭৫০ টাকায় ফোনের আইএমইআই নম্বর দিয়ে মোবাইল নম্বর, ৫৫০ টাকায় এনআইডি নম্বরে নিবন্ধিত সব মোবাইল নম্বরের তালিকা, ২,৭০০ টাকায় অন্যের ফোনের এসএমএস জানা, ৫০০ টাকায় মোবাইল নম্বর দিয়ে আইএমইআই নম্বর, ১,৬৫০ টাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের সব তথ্য, ৩০০ টাকায় এনআইডি মামলার তথ্য।
অতিরিক্ত সেবার মধ্যে নিজের এনআইডি দিয়ে বাবা ও মায়ের এনআইডি কার্ডের তথ্য, টিআইএনের সব ধরনের তথ্য, ১,০৫০ টাকায় এনআইডি থেকে পাসপোর্টের সব তথ্য, ১,৮০০ টাকায় মোবাইল ব্যাংকিংসহ সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডিবিবিএল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য।
কাজ হোক বা না হোক, আবেদন দাখিল করলেই অ্যাপসের হিসাব নম্বর থেকে কৌশলে টাকা কেটে নেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, এই চক্র মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এনআইডি কার্ড, পুলিশের সিডিএমএস-ভিত্তিক মামলার তথ্য, কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) এবং ব্যাংকের গ্রাহক সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করছে। প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা চক্রে জড়িত থাকতে পারেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ ধরনের পাঁচ-ছয়টি অ্যাপ চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসব কার্যক্রমে যুক্ত না হলে গোপনীয় তথ্য এইভাবে পাওয়া যেত না। এ কারণে বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি