লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ ও র্যালি

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী টমি রবিনসনের ডাকে এক বিশাল অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোয়াইটহলে শুরু হওয়া এ সমাবেশে পুলিশি হিসাবে প্রায় এক লাখ ১০–৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লন্ডনে চরম ডানপন্থিদের এটি সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
রবিনসনের আহ্বানে অনুষ্ঠিত এই ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক মিছিলে বিভিন্ন বক্তা বক্তৃতা দেন। এছাড়াও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ধনকুবের মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক বক্তব্য দেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচন আয়োজনের ডাক দেন।
তিনি বলেন, আপনারা পারবেন না; আমাদের চার বছর অপেক্ষা করা বা পরবর্তী নির্বাচন যতদিনেই হোক— এটি বেশ দীর্ঘ সময়। কিছু না কিছু করতে হবে।
রবিনসনের সমর্থকরা ব্রিটেনের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা, ইংল্যান্ডের লাল-সাদা সেন্ট জর্জ ক্রস, মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা বহন করছিলেন। অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন’ টুপি পরেছিলেন। মিছিলে উপস্থিতদের মধ্যে অনেক পরিবারের শিশুও ছিলেন।
অংশগ্রহণকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “ওদের ফেরত পাঠাও”।
রবিনসন এই সমাবেশকে বাকস্বাধীনতার উৎসব হিসেবে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও এ মিছিলে বুধবার গুলিবিদ্ধ মার্কিন রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ককে স্মরণ করা হয়।
রবিনসনের প্রকৃত নাম স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন। তিনি নিজেকে রাষ্ট্রীয় অন্যায় উন্মোচনকারী সাংবাদিক দাবি করেন। সম্প্রতি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন; গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন, কারণ সিরিয়ার এক শরণার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের কারণে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। ওই শরণার্থী তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা জিতে গেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকবার ব্যারিকেড ভেঙে পাল্টা মিছিলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিছু পুলিশ কর্মকর্তাও লোহার পাইপ, কাচের বোতল এবং বিয়ারের ক্যান নিক্ষেপের ফলে লাঞ্ছনার শিকার হন। ২৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে চারজন গুরুতর আহত। পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় একদিনে ৪৯ জন নিহত, জাতিসংঘ আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস
মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার ক্লেয়ার হেইন্স বলেন, আমরা আইন মেনে চলা অধিকার নিশ্চিত করব, তবে অপরাধ বা বিশৃঙ্খলা ঘটলে দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নেব।
দিবসজুড়ে লন্ডনে ১ হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল, যাদের মধ্যে ৫০০ অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসেছেন। এছাড়াও, লন্ডনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ ও কনসার্ট থাকার কারণে পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়।
একই সময়ে লন্ডনের কেন্দ্রীয় অংশে কাছাকাছি ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ (SUtR) নামের একটি বর্ণবাদবিরোধী ও অভিবাসীবান্ধব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নেন। তারা ‘বর্ণবাদ নিপাত যাক, অভিবাসীদের মর্যাদা চাই’ এর মতো স্লোগান উচ্চারণ করে।
উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। তবে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা কিছু সময় ব্যারিকেড ভেঙে পাল্টা সমাবেশের দিকে এগোতে চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটস ও ডকল্যান্ডস-এও বর্ণবাদবিরোধী বড় র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
কমিউনিটি নেতারা জানান, ব্রিটেনে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই এবং এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রতিবাদকারীরা দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন, বর্ণবৈষম্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ ও ঐক্য অবিচল থাকবে।
ব্রিটেনে বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের চেয়েও বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে অভিবাসন। চলতি বছর পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে দেশটিতে পৌঁছেছে, যা রেকর্ডসংখ্যা। সমর্থকরা লাল-সাদা ইংল্যান্ডের পতাকাকে জাতীয় গৌরবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখলেও, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের চোখে এটি বিদেশিদের প্রতি শত্রুতার বার্তা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লন্ডনে যেমন চরম ডানপন্থিরা সংগঠিত হচ্ছে, তেমনি অভিবাসীবান্ধব ও প্রগতিশীল শক্তিগুলোও একত্রিত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, যারা এই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
পুলিশ সতর্ক করেছে, কিছু বিক্ষোভকারীর মধ্যে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য ও আক্রমণাত্মক স্লোগান শোনা গেছে, তবে সাধারণ জনগণকে ঘরে বসে থাকার প্রয়োজন নেই।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি