বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের পদত্যাগ

ছবি: সংগৃহীত
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
এটি আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মেজবাউল হক ফোন রিসিভ করেননি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) তাকে বাধ্যতামূলক অবসরের নির্দেশ দেয় এবং এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও ইস্যু করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাপক প্রশাসনিক পরিবর্তন আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। একই সঙ্গে দুই ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান ও নীতি উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তারা সবাই চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ছিলেন। তবে এ পটপরিবর্তনের পর এবার প্রথমবারের মতো একজন নিয়মিত কর্মকর্তা পদত্যাগ করলেন।
আরও পড়ুন: ধুঁকতে থাকা ৫ ব্যাংক একীভূত হয়ে যে নাম হতে যাচ্ছে
মেজবাউল হকের পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও আলোচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার পদে থাকা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আপত্তি ওঠে। এর পর তাকে প্রধান কার্যালয় থেকে বদলি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে পাঠানো হয়।
মো. মেজবাউল হক ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পান এবং একই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের দায়িত্ব পান। দীর্ঘদিন তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেন উদ্যোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তার ঘনিষ্ঠতার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে রাজশাহী অফিসে বদলি করা হয়।
মেজবাউল হক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগে এমএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক ইতিহাসে মেজবাউল হকের পদত্যাগ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চুক্তিভিত্তিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পদত্যাগ করলেও এবার প্রথমবারের মতো একজন নিয়মিত কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ ছাড়লেন। ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও রিজার্ভ চুরি মামলা, রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনকে তার পদত্যাগের প্রেক্ষাপট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি