দুর্নীতির অভিযোগে নজরদারিতে অর্ধশতাধিক এনবিআর কর্মকর্তা
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অন্তত ৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ, কর ফাঁকিতে সহায়তা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, করদাতাকে হয়রানিসহ নানা অভিযোগে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের আওতায় এসেছেন।
এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থা এসব অভিযোগ যাচাই করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।
১ জুলাই (মঙ্গলবার) এনবিআরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে প্রতি অর্থবছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। এই হিসাবে গত ১৫ বছরে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতির কারণে অনলাইনভিত্তিক রাজস্ব আহরণ পদ্ধতি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২ জুলাই (বুধবার) পাওয়া একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকে ঘুষ, প্রভাব খাটানো ও অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর ট্রাইব্যুনালে রায় প্রভাবিত করেছেন। সাবেক এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে চার মাসে ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকিতে সহায়তার অভিযোগ এসেছে।
তদন্তে দেখা গেছে, একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরে কোটি টাকা ব্যয় করে সন্তানদের বিদেশে পড়াচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি ও বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। তাদের অনেকের নামে বা অন্যদের নামে দেশে-বিদেশে জমি, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্যও মিলেছে। এসব বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্যাট তদন্ত অধিদপ্তরের সহায়তায় তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, দুর্নীতিবাজদের এনবিআরে কোনো জায়গা হবে না। সততা ও জবাবদিহি বাড়ানো হয়েছে। করদাতা হয়রানির শিকার হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: এনবিআরের ৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের অধীনে এনবিআর দুর্নীতিমুক্ত হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতিবাজ চক্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে বসাতো এবং কর ফাঁকির মামলায় রায় প্রভাবিত করতো। এতে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
নজরদারিতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর রশীদ মিয়া, এনবিআরের সদস্য লুতফুল আজীম, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬-এর উপ-কর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাছান, আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, কর অঞ্চল-৮-এর অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মো. মোরশেদ উদ্দীন খান, উপ-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার, এবং কাস্টমস-ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু।
সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ বলেন, রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, তাহলে রাষ্ট্র চলবে কীভাবে? সরকারকে এনবিআরকে দুর্নীতিমুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে এক সভা শেষে বলেন, আমি চাই ট্রান্সপারেন্সি ও অ্যাকাউন্টিবিলিটির সঙ্গে জনগণকে সেবা দেওয়া হোক। যারা সৎ, তাদের সমস্যা হয় না, জবাবদিহির আওতায় আসে শুধু অনিয়মকারীরাই।
সরকার ইতোমধ্যে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা, শূন্যপদে নিয়োগ ও সারা দেশে নতুন রাজস্ব দপ্তর খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, আইনগত ব্যবস্থার সুপারিশও এসেছে এনবিআরের নিজস্ব প্রতিবেদনে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








