News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:১৪, ১০ জুন ২০২৫

নতুন সম্ভাবনার সন্ধানে ড. ইউনূসের লন্ডন সফর

নতুন সম্ভাবনার সন্ধানে ড. ইউনূসের লন্ডন সফর

ছবি: সংগৃহীত

চার দিনের সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফর কেবলমাত্র রাজকীয় সম্মাননা গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং এতে স্থান পেয়েছে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক, বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ছুঁয়ে যাওয়া কিছু আলাপচারিতাও।

১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের হাত থেকে ‘কিং চার্লস থ্রি হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ করবেন ড. ইউনূস। দ্য কিংস ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত এই সম্মাননা টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রীতি এবং মানবিক মূল্যবোধে যাদের অবদান অনন্য, তাদের দেওয়া হয়। গত বছর এই পুরস্কার লাভ করেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন।

এই পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস আরও একবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সম্মাননা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশকে নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে সহায়ক হবে।

ড. ইউনূসের সঙ্গে মঙ্গলবার (১০ জুন) পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ এবং মেনজিস এভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলি।

এই সাক্ষাৎগুলোতে বিমান প্রযুক্তি, কারিগরি সহায়তা ও সম্ভাব্য বিনিয়োগসহ বেশ কিছু কৌশলগত ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের করপোরেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও এভিয়েশন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। দেশের রপ্তানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বিনিয়োগের সম্ভাবনা পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অংশ হতে পারে।

আরও পড়ুন: লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

লন্ডন সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। পাশাপাশি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার আলাদা আলাদা সাক্ষাৎ হবে বলে নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকগুলো মূলত আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক সহায়তা, অর্থপাচার রোধ এবং আইনি সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করেই আয়োজিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ১১ জুন লন্ডনের খ্যাতনামা চ্যাথাম হাউসে ‘বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেবেন। এই বক্তৃতা মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বাংলাদেশের অর্ন্তসাংবিধানিক রূপান্তর ও পুনর্গঠনের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া তুলে ধরার একটি কৌশলী পদক্ষেপ।

চ্যাথাম হাউস বক্তৃতাকে পশ্চিমা বিশ্বে কূটনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপের মঞ্চ হিসেবে গণ্য করা হয়। একে অনেকে ‘রাষ্ট্রীয় কূটনীতির অলিখিত পরীক্ষা’ হিসেবেও দেখেন।

এই সফরে সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত সম্ভাব্য ইভেন্ট হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ। ১৩ জুন এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে সফরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

যদিও সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু বলা হয়নি, তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়; বরং এটি বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সম্ভাব্য সমাধানের আভাস দিতে পারে।

ড. ইউনূসের এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। তাদের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, এই সফর কেবল সম্মাননা গ্রহণে সীমাবদ্ধ নেই—বরং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার ও দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

এই সফর একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও মানবিক ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে তা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। রাজকীয় সম্মান, কৌশলগত বিনিয়োগ আলোচনা এবং রাজনৈতিক ডায়ালগ—সব মিলিয়ে এই সফরকে বিবেচনা করা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মাইলফলক হিসেবে।

১৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু এই চার দিনের সফরের প্রতিটি ঘণ্টা যেন বাংলাদেশের জন্য একেকটি নীরব বার্তা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে—বিশ্বমঞ্চে নবযাত্রার আরেকটি ইঙ্গিত।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়