মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন: তারেক রহমান
ছবি: সংগৃহীত
অবিলম্বে আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশে গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে। গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্থও বিপন্ন হয়। মাফিয়া প্রধানের পলায়নের পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিএনপির বর্ধিত সভায় স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংসদের এলডি হলে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বক্তব্যের শুরুতেই তারেক রহমান দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি স্মরণ করেন তার দলের নেতাকর্মীদের।
তারেক রহমান বলেন, সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছেনা, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবেনা।
আরও পড়ুন: উৎসাহ উদ্দীপনায় শুরু বিএনপির বর্ধিত সভা
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।
মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং, প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমি গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিতে চাই, বিএনপি শুধু ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনার ভোটের প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি জনগণের সমর্থন চাই, সবার সহযোগিতা চাই।
সভার শুরুতে গত ১৬ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ এবং দলের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠশেষে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
জোহরের নামাজ ও দুপুরের আহারের বিরতির পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে। সারাদেশ থেকে আসা নেতারা এই সেশনে বক্তব্য দেবেন।
সভাপতি তারেক রহমানের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাতে শেষ হবে বর্ধিত সভার দ্বিতীয় অধিবেশন।
বর্ধিত সভায় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ২০১৮ সালে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী, সব সাংগঠনিক জেলা, উপজেলার সভাপতি, সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন সময়ে গঠিত উপ-কমিটিগুলোর সদস্যরাও উপস্থিত আছেন। এছাড়া মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এমন ব্যক্তিরাও সভায় আমন্ত্রিত।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সদস্য এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নিয়েছেন সভায়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








