সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ায় রাজনীতি ও ধর্ম ইস্যুতে: ডিসমিসল্যাব
ফাইল ফটো
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে রাজনীতি ও ধর্ম ইস্যুতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৪২ দশমিক ৯ শতাংশ) ছিল রাজনৈতিক। এরপরই রয়েছে ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য (সাড়ে ১১ শতাংশ)।
চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ফ্যাক্ট-চেক প্ল্যাটফর্মগুলো ৯১৭টি ইউনিক ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। শেখ হাসিনাকে মহান করে ছড়ানো হয়েছে ভুল তথ্য; আর ড. ইউনূসকে ঘিরে ছড়ানো ভুল তথ্যের বেশিভাগই ছিল নেতিবাচক।
তথ্য ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। তারা ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছড়ানো ভুল তথ্যের প্রবণতা ও বয়ান নিয়ে সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের আটটি ফ্যাক্ট-চেক ওয়েবসাইটের ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ডিসমিসল্যাব।
আরও পড়ুন: ‘গণঅভুত্থানের সাথে মুক্তিযুদ্ধকে জড়িয়ে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই’
ডিসমিসল্যাব জানায়, তাদের ডেটাবেজের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কাজ করা আটটি তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৫০০–এর বেশি ভুয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করেছে। ডিসমিসল্যাব সেখান থেকে বাংলাদেশে ভাইরাল তিন হাজারের বেশি একক ভুল তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদনকে চিহ্নিত করেছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে ৫৮ শতাংশ বেশি ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক। কারণ, ২০২৪ সালে ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেষ দিকে এসে ধর্মীয় উত্তেজনার মতো বিষয়।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিএনপিকে নিয়েও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও ভিডিওর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এরপরে ছবি ছিল ২৮ শতাংশ ও গ্রাফিক কার্ড ১৪ শতাংশ।
গত বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ায় জুলাইয়ে শেষ দিক থেকে ও আগস্ট মাসে। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলে, যা পরবর্তী সময়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এ ছাড়া আগস্টে বন্যা হয়েছিল, ফলে বন্যা–সম্পর্কিত ভুল তথ্যও ছড়ায়।
সবচেয়ে বেশি ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়িয়েছে রাজনীতি নিয়ে। এরপরে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ হচ্ছে ধর্মীয় ইস্যুতে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও জুনে ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় তুলনামূলক কম ছিল। এ সময় খেলাধুলা–সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়ায় যার প্রধান বিষয় ছিল ক্রিকেট ও ক্রিকেট তারকারা। সে সময় বিপিএল, আইপিএল ছিল। এ সময়ে জুয়ার প্রচারে তারকা ক্রিকেটারদের ছবি এবং তাদের নামে মিথ্যা বিবৃতিও ব্যবহার করা হয়েছিল। জুনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে তখন খেলা সম্পর্কে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পায়।
২০২৪ সালে প্রকাশিত তথ্য-যাচাই প্রতিবেদনের শিরোনামে ভারতের নাম এসেছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ও সে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারে অনেক বেশি সরব ছিলেন। তাদের প্রচারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সম্পর্কে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টার পাশাপাশি বিভেদ ছড়িয়ে দেয়ার মতো বিষয় ছিল। এরপর ফিলিস্তিন, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান-সম্পর্কিত ভুল তথ্যও ছিল।
যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নাম ভুল তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় এই ভুল তথ্যের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রচারিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। যেখানে পুরনো ছবি বা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন ছবি-ভিডিও ব্যবহার করা হয়।
যেমন: বিক্ষোভকারীদের হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিহত, ছাত্রলীগ বা যুবলীগের হয়ে যারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান, তারা মূলত শিবিরের সদস্য। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএনপিকে নিয়েও গত বছর নানা ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।
আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটি ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ, মিছিল ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পুরনো ছবি ও ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা হয়েছিল।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি








