সার্কের বিকল্প নিয়ে আলোচনা: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক পদক্ষেপ
ফাইল ছবি
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ইসহাক দারের সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সমুদ্র বাণিজ্য শুরু এবং যৌথ কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উভয় দেশ তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এছাড়া, শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের বৈঠক এবং কূটনৈতিক ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানে সম্মতি সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করেছে।
এই সফরকে দুই দেশের গণমাধ্যমেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলো এই সফরকে ‘দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দ্য পাকিস্তান অবজারভার-এর মতো শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এই সফরের প্রতীকী ও বাস্তবিক তাৎপর্যকে তুলে ধরেছে।
এক দশকেরও বেশি সময় পর কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন অধ্যায় শুরুর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো এই সফরকে বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও মূল্যায়ন করছে। দ্য পাকিস্তান অবজারভার-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যের যে ধারণা ছিল, তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পাকিস্তান এই অগ্রগতিকে নয়াদিল্লির প্রভাবমুক্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছে।
আরও পড়ুন: একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো আগেই দুইবার সমাধান হয়েছে: ইসহাক দার
সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা অথবা একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পক্ষেও তারা মত দিয়েছে।
পত্রিকাটি বলছে, যদি ভারত অর্থবহ অগ্রগতিতে বাধা দেয়, তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং অন্যান্য আগ্রহী দেশগুলোর উচিত জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন, জ্বালানি সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে দ্বিধা না করা।
ইসহাক দারের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
যৌথ কমিশন গঠন: বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা একটি যৌথ কমিশন গঠনে সম্মত হয়েছেন।
সামরিক সহযোগিতা: দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা আস্থা তৈরি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পথ অনুসন্ধানের জন্য বৈঠক করেছেন।
ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার: কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
এছাড়াও, গত বছর দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র বাণিজ্য শুরু হয়েছিল, যা চলতি বছরের শুরুতে আরও জোরদার হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্য পাকিস্তান অবজারভারের মতে, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ইসলামাবাদ-ঢাকা সম্পর্কে একটি নতুন আশাব্যঞ্জক পর্যায় শুরু হয়েছে। উভয় দেশই এখন বাস্তবতা ও পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত। উভয় দেশের জনগণ থেকে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, এবং বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








