জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য, জামিনে বেরিয়েই অস্থিরতা
ফাইল ছবি
চলমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে দেশজুড়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর একাধিক অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র কারবারি, পাশাপাশি দুটি পৃথক হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছিলো।
সোমবার (১৮ আগস্ট) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ নাজমুল্লাহেল ওয়াদুদ জানান, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের চিহ্নিত মাদক কারবারি চুয়া সেলিম এবং বুনিয়া সোহেল জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও মাদক কারবার শুরু করে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ অপরাধীদের ধরা। আমরা তাদের বারবার গ্রেফতার করছি, কিন্তু তারা আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
তবে, র্যাব-২ এর হাতে গ্রেফতার হওয়া ‘কবজি কাটা আনোয়ার’ এখনো কারাগারে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেজর ওয়াদুদ বলেন, একটি কুচক্রী মহল অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরস্পরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে কাজ করছে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
কেরানীগঞ্জে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার, গ্রেফতার ৫
মেজর ওয়াদুদ আরও জানান, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকায় র্যাব-২ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগাজিনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার (১৭ আগস্ট) রাতে এই অভিযান চালানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. সাইদুল ইসলাম ওরফে স্বপন, মো. রায়হান, মেহেদী হাসান ইউসুফ, মো. আবুল হাসেম এবং জুয়েল মিয়া।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাইদুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসা থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে সাভার ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তার অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা অবৈধ অস্ত্র কেনা-বেচার পাশাপাশি জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন সময় অস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতো। অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
সমকামিতার বিরোধে যুবক হত্যা: র্যাবের হাতে গ্রেফতারমূল অভিযুক্ত
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় বস্তাবন্দি অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব-১০ এর একটি দল প্রধান অভিযুক্ত জহুরুল মুন্সী ওরফে সুলতান জহিরকে (২৫) গ্রেফতার করেছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার চারালদিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়।
সোমবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, জোরপূর্বক সমকামিতার সম্পর্কে বাধ্য করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সুলতান জহির এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন।
র্যাব জানায়, গত ১৩ আগস্ট মো. রেদুয়ান (২৮) তার মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। তার মা রাবেয়া বেগম সদরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ১৭ আগস্ট স্থানীয়রা একটি বিল থেকে তার মরদেহ ভাসতে দেখে খবর দিলে রেদুয়ানের মা মরদেহটি শনাক্ত করেন। এরপর তিনি ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর দল জহিরকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, নিহতের ব্যাংকের কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মানিব্যাগ, জুতা, রক্তমাখা জামাকাপড় এবং মাদারীপুর থেকে নিহতের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জহির স্বীকার করেন, রেদুয়ানের সঙ্গে তার পূর্বের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পরে তিনি সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। গত ১৩ আগস্ট রেদুয়ান তাকে জোরপূর্বক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চাকু দিয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর মরদেহটি পাশের বিলে ফেলে দেন। ১৬ আগস্ট মরদেহের পচা দুর্গন্ধ পেয়ে তিনি দুটি বালুর বস্তা দিয়ে মরদেহটি পানিতে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রেপ্তারকৃত জহিরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন: জামিন পেলেন ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গ্রেফতার সেই রিকশাচালক
কেরানীগঞ্জে সৎ ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা, বাবা গ্রেফতার
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার আক্রোশে সৎ ছেলে রাকিবুল সরদারকে (১৪) শ্বাসরোধ করে হত্যা করার অভিযোগে বাবা আজহারুল সরদারকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রবিবার (১৭ আগস্ট) রাতে খুলনার হরিণটানা এলাকা থেকে র্যাব-১০ এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, রাকিবুলের মা তফুরা খাতুনের সঙ্গে আজহারুলের দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর আজহারুলের নির্যাতনের কারণে তিন-চার মাস আগে তফুরা আদালতের মাধ্যমে তাকে তালাক দেন। এরপর থেকে আজহারুল তাকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট রাকিবুল নিখোঁজ হন। তার মা তফুরা ছেলের খোঁজ জানতে চাইলে আজহারুল বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন এবং একপর্যায়ে জানান যে রাকিবুল তার সঙ্গে সাতক্ষীরায় আছে এবং বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকাও নেন।
১৬ আগস্ট তফুরা খবর পান যে তার ছেলের মরদেহ আজহারুলের ভাড়া বাড়িতে আছে। পরে পুলিশ ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পশ্চিমপাড়ায় আজহারুলের ভাড়া বাড়ি থেকে রাকিবুলের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর তফুরা খাতুন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৬ এর সহযোগিতায় খুলনায় অভিযান চালিয়ে আজহারুলকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজহারুল স্বীকার করেন যে, ১৪ আগস্ট রাতে তিনি তার ভাড়া বাড়িতে রাকিবুলকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং মরদেহ গুমের চেষ্টা করেন। স্ত্রীর তালাকে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানান। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








