News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে শক্তিশালী গাড়ি বোমা হামলা, নিহত ১০

পাকিস্তানে শক্তিশালী গাড়ি বোমা হামলা, নিহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় আধাসামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পস (Frontier Corps - এফসি)-এর আঞ্চলিক সদর দপ্তরের বাইরে একটি শক্তিশালী গাড়ি বোমা হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং ৩২ জন থেকে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। 

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কোয়েটার জারঘুন রোড সংলগ্ন এলাকায় এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণের পরপরই ওই স্থানে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত অভিযানে কমপক্ষে চারজন হামলাকারী নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

কোয়েটার জারঘুন রোড সংলগ্ন মডেল টাউন থেকে হালি রোডে প্রবেশের সময় বিস্ফোরকবোঝাই গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়। 

সংবাদমাধ্যম ডন ও অন্যান্য সূত্র অনুযায়ী, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই ছিল যে আশপাশের ভবন কেঁপে ওঠে, নিকটবর্তী গাড়ি, দোকানপাট ও ভবনের জানালা মুহূর্তেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।

প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বখত মুহাম্মদ কাকার জানিয়েছেন, নিহত ১০ জনের মধ্যে দুইজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মী এবং বাকিরা সাধারণ নাগরিক। আহতদের কোয়েটার সিভিল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হয়েছে। 

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে আহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বিস্ফোরণের পরপরই প্রদেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিউটিতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী নরেশ কুমার, যিনি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া ভবনটির কাছে তার অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি বলেন, আমার মন একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। আমার হাত ও পিঠে কাঁচের টুকরো লেগেছিল। বিস্ফোরণটি ছিল প্রচণ্ড। 

আরেক আহত ব্যক্তি জানান, বিস্ফোরণে তারা পুরোপুরি কেঁপে ওঠেন এবং "সব অন্ধকার হয়ে যায়," এরপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়ন্ত্রণ নিতে আসার আগে পর্যন্ত তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাড়ি ফ্রন্টিয়ার কর্পসের আঞ্চলিক সদর দপ্তরের দিকে মোড় নিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়।

আরও পড়ুন: জেন-জির আন্দোলনে মাদাগাস্কারে সরকার পতন

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি এই ঘটনাকে একটি “সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, পাকিস্তানি জাতির মনোবল দুর্বল করতে এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা কখনো সফল হবে না। আমরা বেলুচিস্তানকে শান্তি ও উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে অভিযোগ করেন, “ভারত সমর্থিত সন্ত্রাসীরা” এই হামলার পেছনে রয়েছে। 

তিনি বলেন, ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ ও ভারতের স্বার্থে কাজ করা উগ্রপন্থিরা পাকিস্তানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে, কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না। 

একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিপথগামী চরমপন্থীরা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই হামলা চালিয়েছে।

তবে, এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।

নিরাপত্তা বাহিনী ও বিশ্লেষকরা প্রাথমিকভাবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) বা বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট (BLF) এর মতো নিষিদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়েছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে বিএলএ বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।

বেলুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম কিন্তু সবচেয়ে কম জনবহুল প্রদেশ। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস এই প্রদেশে। তেল, কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের বিশাল ভান্ডার থাকা সত্ত্বেও এটি দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ রয়ে গেছে। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার প্রদেশের সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদের শোষণ করছে এবং উন্নয়নকে উপেক্ষা করছে।

বেলুচিস্তানেই কৌশলগত গভীর সমুদ্র বন্দর গাওয়াদার অবস্থিত, যা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু। তবে, চীনা বিনিয়োগ এবং “স্থানীয় সম্পদ চুরি”-এর অভিযোগ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যা বারবার স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে চীনা কর্মী ও স্থাপনায় হামলা চালাতে উৎসাহিত করেছে।

এই অসন্তোষ গত কয়েক দশক ধরে একটি বিদ্রোহী আন্দোলনকে ইন্ধন যুগিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য একটি স্বাধীন বেলুচিস্তানের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আরিফ মনে করেন, এই হামলার ঘটনাটি সরকারের বিদ্রোহ-দমন অভিযানের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। 

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে যে গত কয়েক সপ্তাহে বেলুচ লিবারেশন আর্মি এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে, এবং আজকের এই হামলাটি সেই ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হতে পারে। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে প্রদেশের বিশাল, কঠিন ভূ-প্রকৃতির কারণে রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিটি কোণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।

হামলার পর পুরো কোয়েটা শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়