News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১৩:৫৬, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

হংকংয়ের আবাসিক কমপ্লেক্সে আগুনে নিহত বেড়ে ৫৫

হংকংয়ের আবাসিক কমপ্লেক্সে আগুনে নিহত বেড়ে ৫৫

ছবি: সংগৃহীত

হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো জেলায় অবস্থিত ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ২৭৯ থেকে ২৮৯ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দমকল বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, আগুন পুরোপুরি না নেভা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সংবাদ: আলজাজিরা।

এখনো আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে আটটি আবাসিক ব্লক ও প্রায় দুই হাজার ফ্ল্যাট নিয়ে গঠিত বৃহৎ কমপ্লেক্সটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পুরো এস্টেটে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল, ফলে অনেক ফ্ল্যাটের জানালা বন্ধ ছিল এবং বাসিন্দারা আগুনের শুরুতে কিছুই টের পাননি। 

কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা জাল, প্লাস্টিকের কভার, ক্যানভাস এবং পলিস্টাইরিনসহ দাহ্য উপকরণ আগুনের গতি আরও তীব্র করে। দমকল কর্মকর্তাদের মতে, তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার কারণে কয়েকটি ফ্লোরে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাত নামার পর উদ্ধার অভিযান আরও কঠিন হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির এক প্রতিবেদক জানান, পুড়তে থাকা বাঁশ ও গঠনসামগ্রীর ভাঙনের শব্দ বারবার শোনা গেছে। জ্বলন্ত মাচার অংশ এক ব্লক থেকে আরেক ব্লকে পড়ে আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছে। কয়েকটি ভবনের জানালা দিয়ে আগুনের হলুদ শিখা বের হয়ে আশপাশকে আলোকিত করে তোলে।

হংকং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে মারা গেছেন আরও ১৫ জন। গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন অন্তত ৪৫ জন। নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত নয়, কারণ আশ্রয়কেন্দ্রে ক্রমাগত নতুন ভুক্তভোগীরা পরিবার–পরিজনের খোঁজ জানাতে আসছেন।

অগ্নিকাণ্ড–সম্পর্কিত ‘হত্যাকাণ্ড’ অভিযোগে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক ও এক পরামর্শককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভবনে আগুন অস্বাভাবিক গতিতে ছড়ানোর বিষয়টি তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত করেছে। অভিযোগের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: হংকংয়ে বহুতল আবাসিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪

দমকল বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান জানান, আগুনের তীব্রতা, উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষ এবং রাতের অন্ধকার তাদের কাজকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। 

তিনি বলেন, কয়েকটি ফ্লোর থেকে সাহায্যের ডাক পাওয়া গেলেও উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

চার দশকের বেশি সময় ধরে ওই কমপ্লেক্সে থাকা ৬৫ বছর বয়সী ইউন বলেন, অনেক প্রতিবেশী বৃদ্ধ, নড়াচড়া করতে পারেন না। জানালা বন্ধ থাকায় কেউ আগুন টেরই পাননি।

অন্যদিকে ৫৭ বছর বয়সী সো নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, সম্পত্তির চিন্তা করার অবস্থায় নেই। শুধু চাই সবাই নিরাপদে ফিরে আসুক।

শহরের প্রধান নির্বাহী জন লি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ৯০০–র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ভবনে প্রবেশের ঝুঁকি থাকায় বেশ কিছু এলাকা ঘিরে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কাছের একটি মহাসড়কের অংশও সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। 

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তিনি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আগুন দ্রুত নেভাতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মীও রয়েছেন।

সরকার জানিয়েছে, আগুনের কারণ অনুসন্ধান ছাড়াও ভবনের বহিরাংশে ব্যবহৃত উপকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা জালের মান কতটা সঠিক ছিল—তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুনের এমন দ্রুত বিস্তার নিরাপত্তা অনিয়মের বড় ইঙ্গিত।

হংকং একসময় ঘন ঘন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মুখোমুখি হতো, বিশেষ করে দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। সাম্প্রতিক দশকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড অনেক কমে আসে। ওয়াং ফুক কোর্টের দুর্ঘটনা সেই নিরাপত্তা বাস্তবতা আবারও নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি/এনডি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়