মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির ছাদ ধসে ৫ জনের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রের একটি কক্ষের ছাদ ধসে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ধসে পড়া ছাদের নিচে আরও অনেকে আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিস (ডিএফএস) জানায়, বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দমকল বিভাগের পাঁচটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় দিল্লি পুলিশ এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। সম্মিলিত উদ্ধার অভিযানে ধ্বংসস্তূপ থেকে ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) এবং লোকনায়ক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেছে, যাদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ। নিহত দুই পুরুষের বয়স যথাক্রমে ৭৯ ও ৩৫ বছর এবং তিন নারীর বয়স ৪০, ৪০ ও ৪২ বছর।
দুর্ঘটনাটি হুমায়ুনের মূল সমাধির পাশে অবস্থিত একটি ছোট, সবুজ রঙের ধর্মীয় কক্ষের ছাদের অংশ ধসে পড়ার কারণে ঘটেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি দরগাহ শরীফ পাত্তে শাহের একটি কক্ষ ছিল। ছুটির দিন হওয়ায় দুর্ঘটনার সময় সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ছিল।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় ত্রাণবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৫
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছাদ ধসের সময় কক্ষটির ভেতরে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কাঠামোর বয়সজনিত দুর্বলতা এই ধসের জন্য দায়ী হতে পারে।
এছাড়া, কর্মকর্তারা মনে করছেন, সম্প্রতি প্রবল মৌসুমী বৃষ্টির ফলে ছাদের কাঠামো দুর্বল হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব অথবা কাঠামোগত ত্রুটি ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে কর্তৃপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে।
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি ১৫৬২ সালে হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের উদ্যোগে নির্মিত হয়। লাল বেলেপাথরে তৈরি এই সমাধিক্ষেত্রটি বুখারার স্থপতি মির্জা গিয়াস ডিজাইন করেছিলেন। এটি মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ এবং এর নকশা পরবর্তীকালে নির্মিত বহু মুঘল স্থাপনা, যেমন আগ্রার তাজমহলের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
১৯৯৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের (World Heritage Site) তালিকাভুক্ত এই স্থাপনাটিকে “মুঘল রাজবংশের নেক্রোপলিস” (সমাধিক্ষেত্র) বলা হয়, কারণ এখানে হুমায়ুন ছাড়াও প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি মুঘল রাজবংশের সদস্যের কবর রয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ আটকা পড়ে আছেন কি না, তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








