News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২৩ আগস্ট ২০২৫

অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি: সংগৃহীত

অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে এর অপরিমিত ও ভুল ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য এক নতুন ও নীরব হুমকি তৈরি করেছে। 
সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে সামান্য আঘাত বা সাধারণ সংক্রমণের চিকিৎসাও এখন কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

ভারতের চিকিৎসক ডা. পিনাকী দে জানান, আগে নিউমোনিয়া বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো সাধারণ রোগ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই ঠিক হয়ে যেত। তবে এখন সেই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর শরীরে কার্যকর হচ্ছে না। ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজেদেরকে এমনভাবে ওষুধের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে যে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কার্যকর হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে রোগীদের জন্য চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল হয়ে উঠছে। কখনও কখনও একটি সামান্য ক্ষত সঠিক চিকিৎসা না পেলে এক মাসেরও বেশি সময় রোগীকে বিছানায় পড়ে থাকতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর বিকল্প ওষুধ খুঁজে পাওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা অন্যান্য জীবাণু নিজেদের মধ্যে এমনভাবে পরিবর্তন ঘটায় যে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তাদের ওপর কার্যকর হয় না। এর ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা বা নিরাময় করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এটিকে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কেন বাড়ছে সমস্যা?

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মূল কারণগুলো হলো:

  • অযাচিত ও অপ্রয়োজনে ব্যবহার: অনেকেই সামান্য সর্দি-কাশি বা ভাইরাল জ্বরের জন্য ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন, যেখানে এটি কার্যকর নয়।
  • অসম্পূর্ণ কোর্স: সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না করলে জীবাণুগুলো বেঁচে থেকে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
  • চিকিৎসকের ভুল প্রেসক্রিপশন: অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
  • পশুপালনে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: পশুর মাংস বা দুধের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • সচেতনতার অভাব: সাধারণ মানুষ ফার্মেসি থেকে সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুন: অত্যাবশ্যকীয় ৩৩ প্রকার ওষুধের দাম কমলো

প্রভাব

  • চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়বহুল: বিকল্প শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
  • রোগ নিরাময় কঠিন: মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (MDR) জীবাণুর সংক্রমণে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নাও হতে পারে।
  • অস্ত্রোপচার ও ক্যান্সার চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ: সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

প্রতিকার ও করণীয়

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: জনসাধারণকে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ও এর ভুল ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষিত করতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা: চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না এবং সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে।
  • হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ: অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন: নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স শুধুমাত্র চিকিৎসকদের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জনসাধারণ, চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট এবং সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই নীরব মহামারী রুখতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়