২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন ১৭৩ জন আক্রান্ত, মৃত্যু নেই

ফাইল ছবি
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও প্রতিদিনই নতুন রোগী যোগ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে নতুন করে ১৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে স্বস্তির খবর হলো—এই সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ জন।
এ ছাড়া ঢাকার সিটি করপোরেশনের বাইরের অংশে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৫ জন। রাজধানীর বাইরে বরিশালে সর্বোচ্চ ২৯ জন, রংপুরে ২৭ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, রাজশাহীতে ১৪ জন, খুলনায় ১০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিদিনের পরিসংখ্যান মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৭ হাজার ৯৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন ১১০ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন প্রায় ১ হাজার ২৯০ জন রোগী। তবে একই সময়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন আরও ১৭৮ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ২৬ হাজার ৫৫৭ জন রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে প্রাণ গেলো আরও ৫ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৩১১
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টার আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দৈনিক বুলেটিনে ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু এবং ৩১১ জনের নতুন ভর্তির তথ্য দেওয়া হয়েছিল। চলতি মৌসুমে সেটি ছিল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ফলে শুক্রবারের বুলেটিনে মৃত্যু শূন্য থাকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটিকে আংশিক স্বস্তিদায়ক বলে উল্লেখ করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু সংক্রমণের ভৌগোলিক বিস্তার বাড়ছে। রাজধানীর পাশাপাশি বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেখানে হাসপাতালগুলোতেও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে পরপর কয়েকদিন ধরে উচ্চসংখ্যক রোগী ভর্তির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত শনাক্তকরণ ও সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলোকে এডিস মশার প্রজননস্থল নষ্ট করার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। গত বছর (২০২৪) ডেঙ্গুতে দেশে ৫৭৫ জন মারা গিয়েছিলেন—যা চলতি বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত অনেক বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, মৌসুমি আবহাওয়া এবং বৃষ্টির প্রবণতার কারণে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
সব মিলিয়ে, শুক্রবারের ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান একদিন আগের তুলনায় অনেকটাই ইতিবাচক। আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে, মৃত্যু নেই। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে—এমনটা বলা যাচ্ছে না। বরং বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও নিজেদের আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এবং এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতন হওয়াই এখন প্রধান করণীয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি